
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা বৃহস্পতিবার রূপ নেয় সহিংস সংঘাতে। একাধিক বিমান হামলা ও রকেট আঘাতে থাইল্যান্ডে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন শিশু ও একজন সেনাসদস্য রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
থাই এনকোয়ারারের খবরে বলা হয়েছে, কাম্বোডিয়া থেকে ছোড়া কামানের গোলা সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি স্থানে আঘাত হানে। এতে ৩১ জন আহত হন, যাদের মধ্যে সাতজন সেনাসদস্য। নিহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কাম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে এখনও কোনো হতাহতের তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে খমের টাইমস জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের সেনারা রোহিঙ্গা বসতিপূর্ণ গ্রামসহ কিছু এলাকায় কামানের গোলা ছোড়ে বলে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে।
সীমান্তে গোলাবর্ষণের পর দুই দেশের সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছে। থাইল্যান্ডের শিক্ষামন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সুরিন প্রদেশের ফানম ডং রাক জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, কাম্বোডিয়াও তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর স্কুল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নিচ্ছে।
সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে থাইল্যান্ড ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে। এর একটি বৃহস্পতিবার কাম্বোডিয়ায় প্রবেশ করে একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে। পরে থাই সেনাবাহিনী জানায়, সব যুদ্ধবিমান নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছে।
তবে কাম্বোডিয়ার দাবি, তারা একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, তারা থাই বাহিনীর আগ্রাসনের জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়েছে এবং ‘প্রতি আক্রমণ’ শুরু করেছে।
শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানালেও সামরিক জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত
কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, “আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান চাই। তবে এই পরিস্থিতিতে আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না।” তিনি থাইল্যান্ডের ‘পরিকল্পিত সামরিক আগ্রাসন’ নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার আহ্বান জানান।
থাই দ্বিতীয় আর্মি রিজিয়নের তথ্যমতে, থাই বাহিনী প্রেয়াহ ভিহার মন্দির সংলগ্ন সত্তা সোম পোস্টের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নিয়ে নিয়েছে এবং কাম্বোডিয়ার দুটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে।
এই সংঘর্ষের ঠিক আগের দিন থাই এক সেনাসদস্য ভূমি মাইন বিস্ফোরণে পা হারান। থাই সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, কাম্বোডিয়ার সেনারা থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশে বিতর্কিত প্রাচীন তা মুয়েন থম মন্দিরের কাছে একটি সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।
তবে কাম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, থাই সেনারা বিনা উসকানিতে তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করায় আত্মরক্ষার্থে তারা পাল্টা হামলা চালায়।
গত ২৮ মে সীমান্তে গোলাগুলিতে এক কাম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর থেকেই থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে। এরপর থেকে দেশ দুটি কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তর কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে।
উভয় দেশের সীমান্তজুড়ে এখন টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা ও হস্তক্ষেপের দাবি উঠছে। তবে তা আদৌ কোনো সমাধান বয়ে আনবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।
সূত্র:https://tinyurl.com/4xf24azb
আফরোজা