
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদালত (ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস) এক ঐতিহাসিক রায়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে ঘোষিত কোনো রাষ্ট্র থেকে আগত অভিবাসীদের ইতালি আর আলবেনিয়ায় স্থানান্তর করতে পারবে না। রায়ে বলা হয়েছে, শুধু ‘নিরাপদ দেশের’ তকমা দিয়ে কোনো অভিবাসীকে বিদেশে পাঠানো বৈধ নয়—প্রতিটি আবেদন আলাদাভাবে বিচার করতে হবে এবং আবেদনকারীর মানবাধিকারের পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
এই রায় বিশেষভাবে প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর, যাদের একটি বড় অংশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাগরপথে ইতালিতে পৌঁছানোর পর আলবেনিয়ায় পাঠানো হচ্ছিল।
২০২৩ সালে ইতালি ও আলবেনিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় বাংলাদেশ, মিশরসহ কিছু দেশকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা করে সেখানে থেকে আগত অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় পাঠিয়ে তাদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নীতি গ্রহণ করে ইতালি।
২০২৪ সালে ইতালির সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। এরপর থেকেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছানো অনেক বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত না পাঠিয়ে আলবেনিয়ায় বিশেষ অভিবাসন কেন্দ্র বা শরণার্থী শিবিরে স্থানান্তর করা হচ্ছিল।
এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধেই ইউরোপীয় আদালতে মামলা করেন দুইজন বাংলাদেশি নাগরিক। আদালত রায়ে বলেন, এই ধরনের স্থানান্তর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থি।
আদালতের এমন রায়ে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার সুরক্ষা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।“নিরাপদ দেশ” হিসেবে ঘোষণা করা হলেও আবেদনকারীর ব্যক্তিগত পরিস্থিতি বিচারযোগ্য এবং তারা আবেদন প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ করার অধিকার রাখেন। অন্য দেশে পাঠিয়ে দায়িত্ব এড়ানো যাবে না।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এই রায়ের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি একে ইউরোপীয় আদালতের “জাতীয় সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ” আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, তার সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আইন সংশোধনের চিন্তা করছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “এই রায় অভিবাসন প্রক্রিয়ায় ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় একটি বড় বিজয়। কোনো দেশকে ‘নিরাপদ’ বললেই সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না।
এই রায়ের ফলে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য নতুন আশার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ইতালির নতুন নীতিতে, ‘নিরাপদ দেশ’ থেকে আগতদের আবেদন দ্রুত প্রত্যাখ্যান করে বিদেশে পাঠানো হচ্ছিল। এখন থেকে সেই নীতি কার্যকর করা যাবে না।আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় আদালতের এই রায় শুধু ইতালির নয়, বরং সমগ্র ইউরোপের অভিবাসন নীতিতে প্রভাব ফেলবে।
মিরাজ খান