
ছবি: জনকণ্ঠ
কুয়েতে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতে এবং দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘ভিসা সত্যায়ন ব্যবস্থা’, যার মাধ্যমে কুয়েত আগমনের আগেই শ্রমিকদের জন্য নিয়োগকর্তার ভিসা যাচাই করা হচ্ছে।
এই ব্যবস্থায় কুয়েতস্থ দূতাবাসের প্রতিনিধি দল সংশ্লিষ্ট কোম্পানির চুক্তিপত্র, কর্মপরিবেশ, আবাসন ব্যবস্থা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে উপযুক্ত মনে হলে তবেই ভিসা সত্যায়নের অনুমোদন দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে এই পদ্ধতির মাধ্যমে বহু বাংলাদেশি কর্মী প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন।
কুয়েতের ন্যাশনাল কোম্পানির সুপারভাইজার শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি তার নিকটাত্মীয় কয়েকজন কুয়েতে আনেন তখন দূতাবাসের এমন তদারকি ছিলো না। যার কারনে কোন কিছুই জানা ছিলো না তার। কুয়েতে আনার পর জানতে পারেন তিনি যেই কোম্পানির ভিসা কিনে তার নিকটাত্মীয় কুয়েতে এনেছিলেন সেই কোম্পানির নির্ধারিত কন্ট্রাক্ট শেষ হয়ে যায়। যার কারণে লোকদের ঐ কোম্পানিতে রেসিডেন্সি করতে ব্যার্থ হন এবং কর্মহীন হয়ে পড়ে। তিনি তার নিকটাত্মীয়দের পুনরায় ভিসার মুল্যের অধিক টাকা দিয়ে অনত্র রেসিডেন্সি লাগান।
বর্তমান রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন যে উদ্যোগটি নিয়েছেন এটি মহতী উদ্যোগ, সময়োপযোগী ও প্রবাসীবান্ধব বলে অভিহিত করেছে কুয়েতে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব এর সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক মঈন উদ্দিন সরকার সুমন। তিনি বলেন, দূতাবাসে ভিসা সত্যায়িত হলে কুয়েতে আগত নতুন প্রবাসীদের বছর দুয়েক অন্ততঃ কন্টাক্ট থাকা অবস্থায় কাজ ও আকামা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। লাখ লাখ টাকা খরচ করে বৈধ পথে কুয়েতে এসে অবৈধ হওয়া থেকেও বেচেঁ যাবেন। এই সময়ে কোন সমস্যা হলে কুয়েতের আইনানুযায়ী দূতাবাস সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে। তাছাড়া জবাবদিহিতারও একটা পথ থাকবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট এসোসিয়েশন কুয়েত এর সভাপতি জাহাঙ্গীর খান পলাশ বলেন, কুয়েতগামী প্রবাসীদের কল্যাণে যারা এমন মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ। এই বিষয়ে কঠোরতার পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ভিসা দালালদের দৌরাত্ম্য কমবে।
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত, বাংলাদেশ ক্রিকেট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ সহ কুয়েতে সচেতন প্রবাসীরা রাষ্ট্রদূতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তারা এই ব্যবস্থাকে স্থায়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রবাসীদের কল্যাণে বর্তমান রাষ্ট্রদূতের এই মহতী উদ্যোগকে বানচাল করতে বাংলাদেশে অবস্থানরত একটি অসাধু ভিসা দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা চক্রান্ত করে ভিসা সত্যায়ন ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। অসাধু ভিসা চক্রটি দূতাবাসের সত্যায়ন ব্যাতিত অসৎ উপায়ে ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে নতুন ভিসার কুয়েতগামী শ্রমিকদের পার করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সুত্রে থেকে জানা যায়।
এই প্রেক্ষাপটে কুয়েতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি যেন স্থায়ী করা হয় ও আরও শক্তিশালীভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। যাতে আর কোনো বাংলাদেশি প্রবাসে এসে দালালচক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব না হন।
শিহাব