ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

যেখানে প্রতিটি দিন শুরু হয় একটাই প্রশ্ন দিয়ে—আজ কি খাবার জুটবে?

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ২ আগস্ট ২০২৫

যেখানে প্রতিটি দিন শুরু হয় একটাই প্রশ্ন দিয়ে—আজ কি খাবার জুটবে?

ছবি: সংগৃহীত

গাজা উপত্যকার এক তাবুতে প্রতিদিন ঘুম ভাঙে আবির ও ফাদি সোভ দম্পতির। ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ভাবেন—আজ কীভাবে খাবার জোগাড় করবেন নিজেদের ও ছোট ছয় সন্তানের জন্য?

তাদের হাতে মাত্র তিনটি উপায়: হয়তো কোনো দাতব্য রান্নাঘর খোলা থাকবে; হয়তো ভিড় ঠেলে সাহায্যের ট্রাক থেকে কিছু আটা পাওয়া যাবে; না হলে শেষ ভরসা—ভিক্ষা। তিনটিতেই ব্যর্থ হলে, সেদিন আর কিছু খাওয়া হয় না। এখন এমনটাই হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন।

গাজা শহরের পাশের একটি শরণার্থী ক্যাম্পে বাস করে সোভ পরিবার, যারা বহুবার স্থানচ্যুত হয়েছে। তাদের মতো হাজারো পরিবার আজ ক্ষুধা, গরম আর অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়ছে।

২২ মাস ধরে চলা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মানবিক সহায়তায় বিধিনিষেধ, অবরোধ এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, বর্তমানে “সবচেয়ে খারাপ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি” সেখানে বাস্তবে ঘটছে।

ইসরায়েল মার্চে প্রায় আড়াই মাস খাদ্য ও সাহায্য বন্ধ রেখেছিল, হামাসের কাছে জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে। মে মাসে সহায়তা কিছুটা চালু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।

মিষ্টি পানির অভাবে আবির প্রতিদিন সাগর থেকে পানি আনেন। তাতে সন্তানদের গোসল করান ধাতব বেসিনে দাঁড় করিয়ে। লবণজলে ৯ মাস বয়সী হালার চোখ জ্বলে, কাঁদে—বাকিরা মুখ বুজে সহ্য করে।

আগের দিনের কিছু না থাকলে আবির বের হন ভিক্ষা করতে। কখনও কেউ এক বাটি পাতলা ডাল দেন, কখনও কিছুই মেলে না। ভাগ্য ভালো হলে ডাল গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়ে ছোট সন্তানদের খাওয়ান।

ফাদি সকাল থেকে অপেক্ষা করেন কাছের রান্নাঘরে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় খালি হাতে ফিরতে হয়। একসময় তিনি ট্রাক থেকে খাবার সংগ্রহে যেতেন, কিন্তু সম্প্রতি সেখানে গুলি লেগে তার পায়ে আঘাত হয়। এখন আর যেতে পারেন না।

বড় তিন সন্তান—ইউসুফ, মোহাম্মদ ও মালাক—জেরিকেন নিয়ে বের হয় মিষ্টি পানি আনতে। ভারে কাঁধে, পিঠে বা মাটিতে টেনে আনে তারা সেই বোঝা।

আবির বা তার ছেলে ইউসুফ সাহায্যের ট্রাকের আশায় যান জিকিম এলাকায়। ভিড়ে পিছিয়ে পড়েন, তবে কেউ কেউ দয়া করে কিছু আটা দিয়ে দেন। এইভাবে অল্প যা মেলে, তা দিয়েই দিন চলে।

দুপুরে গরমে শিশুদের ঘুমিয়ে রাখতে চান তারা—তাতে কম শক্তি ক্ষয় হয়, কম খিদে পায়।

বিকেলে ছেলেমেয়েরা ঘুরে বেড়ায় ধ্বংসস্তূপ আর আবর্জনায়—খুঁজে ফেরে কাঠ, কাগজ বা যেকোনো কিছু যা দিয়ে আগুন জ্বালানো যায়। পুরোনো এক পাত্র খুঁজে পেয়েছিল একদিন—এটাই এখন তাদের রান্নার হাঁড়ি।

সব মিলিয়ে, যদি খাবার, পানি ও জ্বালানি তিনটিই মেলে, তবে পাতলা ডালের ঝোল রান্না হয়। না হলে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই।

“আমি খুবই ক্লান্ত। আর পারছি না। যদি যুদ্ধ এভাবে চলতেই থাকে… নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথাও ভাবছি,” বলেন আবির।

এই পরিবারটির জীবন যেন গোটা গাজার প্রতিচ্ছবি। যেখানে প্রতিটি দিন শুরু হয় একটাই প্রশ্ন দিয়ে—আজ কি খাবার জুটবে?

আবির

×