
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েল ও হামাস প্রতিনিধিরা কাতারে গাজা যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু করেছে। এর মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন, যেখানে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।
নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, সোমবারের এই বৈঠকটি যুদ্ধবিরতি ও অধিকতর জিম্মি মুক্তির বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছাতে সহায়ক হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি আরও জানান, আলোচনা দলকে তিনি এমন একটি চুক্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন যা ইসরায়েলের শর্ত অনুযায়ী হয়।
হামাস দাবি করেছে, তারা সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তবে দুই পক্ষের মধ্যে এখনও স্পষ্ট মতপার্থক্য রয়ে গেছে, যেগুলো নিরসন না হলে কোনো চুক্তি কার্যকর হবে না।
হামাস তাদের পুরনো দাবিগুলোই জোর দিয়ে বলছে—এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিরতির পর সকল ধরনের শত্রুতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার।
ইসরায়েল এসব শর্ত আগে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং নেতানিয়াহুও তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন বলে মনে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে তিনি বলেন, তার তিনটি লক্ষ্য:
১. জীবিত ও মৃত সকল জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনা,
২. হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং
৩. গাজাকে যেন আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি হিসেবে ব্যবহার করা না যায়, তা নিশ্চিত করা।
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পরোক্ষ আলোচনা—কারণ গত মার্চে শেষ হওয়া আগের যুদ্ধবিরতির পর বহু উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
ইসরায়েল হামাসের উপর আবারও প্রবল সামরিক অভিযান শুরু করেছে এবং টানা ১১ সপ্তাহ ধরে গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে অবরোধ জারি রেখেছে, যা কিছুটা শিথিল হয় কয়েক সপ্তাহ আগে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা হামাসের ১৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে এবং বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে হত্যা করে।
তবে এর ফলে গাজায় বেসামরিক প্রাণহানি বেড়েই চলেছে। গাজার হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র রবিবারেই ৩০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো—কাতারে চলমান এই আলোচনা কি এমন কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে, যা দুই পক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে? কিংবা ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে বোঝাতে পারবেন যে, এখনই যুদ্ধ থামানোর সময়?
ইসরায়েলে বহু মানুষ বিশ্বাস করছেন, যুদ্ধ থামিয়ে হলেও বাকি জিম্মিদের উদ্ধার করাটা মূল্যবান। তাই শনিবার সন্ধ্যায় তারা রাস্তায় নেমে এসে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছানো হয়।
তবে নেতানিয়াহুর সরকারে কট্টরপন্থী মন্ত্রীরা—জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ—গাজা থেকে হামাস সম্পূর্ণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ থামানোর ঘোর বিরোধিতা করেছেন।
আবারো যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, আবারো অনিশ্চয়তা রয়েছে—দুই পক্ষ তাদের পূর্ব ঘোষিত কঠোর অবস্থান থেকে কতটা সরে আসতে রাজি হবে, সেটিই দেখার বিষয়।
এদিকে গাজাবাসী এবং সেখানে আটক থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারগুলো প্রার্থনা করছে, যেন এটি আরেকটি ‘ভ্রান্ত প্রত্যাশা’ না হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। সেই প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭,৩৮৮ জন নিহত হয়েছেন।
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা