ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পালন করেছে ধর্মীয় আচার

আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েছে ইসরাইলিরা

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ৩ জুলাই ২০২৫

আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েছে ইসরাইলিরা

আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েছে ইসরাইলিরা

ইসরাইল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে হামলা চালিয়েছে কয়েক ডজন ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী। বৃহস্পতিবার ইসরাইলি ওই বসতি স্থাপনকারীরা আল-আকসা চত্বরে ঢুকে পড়ে বলে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে। এই বসতি স্থাপনকারীরা ইসরাইলি নাগরিক।

তারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে দখলকৃত পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের জমিতে অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে ধর্মীয় আচার পালন করেছে ওই বসতি স্থাপনকারীরা। খবর আলজাজিরার।
মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ। ইসরাইলের ইহুদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের চুক্তি অনুযায়ী, আল-আকসা মসজিদ চত্বর কেবল মুসলিমদের থাকবে। জেরুজালেমের প্রধান রাব্বির দপ্তর থেকেও আল-আকসা চত্বরে ইহুদিদের উপাসনা নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে। ইসরাইলের অর্থোডক্স ইহুদিরা এই নীতি মেনে চললেও দেশটিতে বাড়তে থাকা জাতীয়তাবাদী ইহুদি সম্প্রদায় এই নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। আল-আকসা চত্বরের একাংশে ইহুদিদের উপাসনালয় সিনাগগ নির্মাণের দাবি করেছে তারা। ফিলিস্তিনিরা এই দাবির তীব্র বিরোধী এবং এ নিয়ে আল-আকসায় বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলিদের সংঘাতও হয়েছে।
এদিকে ইরানে সদ্যই শেষ হওয়া সংঘাতের পর এবার মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে হামলার হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় কাটজ বলেন, ইয়েমেনের পরিণতি হবে তেহরানের মতো। আমরা তেহরানে সাপের মাথায় আঘাত হেনেছি। ইয়েমেনে সাপের বাকি দেহে আঘাত করা হবে। এক্স বার্তায় তিনি বলেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে যে হাত উঠবে, সেই হাত কেটে ফেলা হবে।

টানা ১২ দিন সংঘাতের পর গত ২৪ জুন ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি হয় ইসরাইলের। তারপর গত ৯ দিনে ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একাধিকবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের অর্ধেক অংশ নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হুতি। তবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই সেসব ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে ফেলতে পেরেছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। সর্বশেষ বুধবার ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে হুতিরা। 
সেই ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্ট বা ধ্বংস করার পর এক্সে এই হুমকি দিয়েছেন কাটজ। এদিকে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর অন্তত চার হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে হিজবুল্লাহর কমান্ডার ও শীর্ষ নেতারাও ছিলেন। বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল হাদাথের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীন গোষ্ঠীটির প্রায় ৪ হাজার সদস্য নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে উভয় পক্ষের এক যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধের অবসান ঘটে। আল-হাদাথের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরাইলের হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর সংগঠনটির প্রায় ২ হাজার সদস্য নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। 
বিপুল সংখ্যক যোদ্ধার প্রাণহানির ঘটনার পরও বর্তমানে হিজবুল্লাহর প্রায় ৬০ হাজার সদস্য সক্রিয় রয়েছেন। সৌদি এই সংবাদমাধ্যম বলেছে, লেবাননের লিতানি নদীর দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা এক সময় হিজবুল্লাহর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ছিল। বর্তমানে ওই এলাকা লেবাননের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, ওই এলাকায় আর কোনো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না হিজবুল্লাহ।

এছাড়াও লেবাননের বেকা উপত্যকা ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে হিজবুল্লাহ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর মাঝারি ও ভারি পাল্লার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অস্ত্র ইসরাইলের হামলায় ধ্বংস হয়েছে অথবা লেবাননের সেনাবাহিনী জব্দ করেছে। অন্যদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজার একটি জনপ্রিয় সমুদ্রতীরবর্তী ক্যাফেতে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৫০০ পাউন্ডের (২৩০ কেজি) বোমা ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, গেল সোমবার পশ্চিম গাজা সিটির ওই ক্যাফেতে হামলা চালানো হয়। যেখানে অধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াত রয়েছে। 
আল বাকা নামের ক্যাফেটির ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে- শিশু, নারী এবং বয়স্ক ব্যক্তিসহ অরক্ষিত বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করার জন্য একটি এমকে-৮২ বোমা ব্যবহার করেছে ইসরাইল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এ ধরনের শক্তিশালী অস্ত্রের ব্যবহার- যা একটি বিশাল বিস্ফোরণ তরঙ্গ তৈরি করে এবং বিস্তৃত অঞ্চলে ছিটিয়ে দেয়- প্রায় নিশ্চিতভাবেই বেআইনি। এটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

×