ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানের গার্ড প্রধান সালামির ৪৩ বছরের সামরিক জীবন

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ১৪ জুন ২০২৫

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানের গার্ড প্রধান সালামির ৪৩ বছরের সামরিক জীবন

ছবি: সংগৃহীত

তেহরানে ইসরায়েলের চালানো বড় ধরনের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি। শুক্রবার ভোররাতে চালানো এই অভিযানে "অপারেশন রাইজিং লায়ন" নামে কোডনেম ব্যবহার করে ইসরায়েলি জেটবিমান একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালায়। লক্ষ্যবস্তু ছিল পরমাণু কেন্দ্র, সামরিক কমান্ড সেন্টার, ও অন্যান্য স্পর্শকাতর অবকাঠামো।

IRGC সদর দপ্তরে হামলার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সালামি। ইরানি গণমাধ্যম তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানান, তিনি "শহীদ" হয়েছেন এবং এই হামলার জন্য ইসরায়েলি সরকারকে দায়ী করা হয়েছে।

কে ছিলেন হোসেইন সালামি?
১৯৬০ সালে ইরানের ইসফাহান প্রদেশের গোলপায়েগানে জন্মগ্রহণ করেন হোসেইন সালামি। ১৯৮০ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধ শুরুর সময় তিনি ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডে যোগ দেন। পরে তাকে কারবালা এবং ইমাম হোসেইন ১৪তম ডিভিশনের কমান্ডার করা হয়। তিনি IRGC নৌবাহিনীর ‘নুহ সদর দপ্তর’ও পরিচালনা করেন।

যুদ্ধের পরে পড়াশোনা ও পদোন্নতি
যুদ্ধ শেষের পর ইরানের স্টাফ কলেজ থেকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি IRGC-র জয়েন্ট স্টাফের অপারেশন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি তাকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করেন এবং IRGC-এর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করেন।

পরমাণু কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ২০০৬ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সালামির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রও তাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে। ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাকে ও আরও সাতজন ইরানি কর্মকর্তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ইসরায়েল-বিরোধিতায় কট্টর অবস্থান
২০১৯ সালে সিরিয়ায় ইরানি অবস্থানে ইসরায়েলি হামলার পর সালামি বলেছিলেন, “আমাদের কৌশল হলো, এই জায়নিস্ট শাসন ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক মানচিত্র থেকেই মুছে ফেলা।” তার নেতৃত্বে ইরানের সামরিক কর্মকাণ্ড আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত
২০২৩ সালে ফরাসি প্রসিকিউটররা সালামির বিরুদ্ধে মামলা করে, যেখানে অভিযোগ আনা হয় যে তিনি মাহসা আমিনির মৃত্যু-পরবর্তী বিক্ষোভ দমন ও এর পক্ষে সন্ত্রাসবাদের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।

সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সরাসরি যুদ্ধ
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইসরায়েল সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে সাতজন IRGC কমান্ডারকে হত্যা করে। এর প্রতিশোধে ইরান ৩০০-এর বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছুঁড়ে মারে। তবে প্রায় ৯৯% ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল ও তার মিত্ররা ভূপাতিত করে। সেসময় সালামি বলেছিলেন, “এটি একটি নতুন কৌশলগত যুগের সূচনা।”

মুমু ২

×