ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

কাশ্মীর সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলিতে ৩ ভারতীয় নিহত

প্রকাশিত: ০৮:২০, ৭ মে ২০২৫

কাশ্মীর সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলিতে  ৩ ভারতীয় নিহত

ছবি : সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) সংলগ্ন এলাকায় পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ও বুধবার (৭ মে) সকাল পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে গোলাগুলি ও পাল্টা হামলার ঘটনায় প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

 

 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এপি ও রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে তিনজন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে ভারতও পাল্টা হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এর আগে মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতের একটি ব্রিগেড সদরদপ্তরে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করার দাবি করেছে। পাকিস্তানের সরকারি টিভি পিটিভি এবং সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের তথ্য অনুযায়ী, এলওসি'র দুদনিয়াল সেক্টরে একটি ভারতীয় চৌকিতেও মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে।

এদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দাবি করেছেন, পাল্টা প্রতিশোধমূলক হামলায় পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। একটি রাফায়েল ও একটি এসইউ-৩০ বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্টের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় এবং আরও একটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান পুলওয়ামার আওয়ান্টিপোরার কাছে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের সব যুদ্ধবিমান নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে।

তবে ভারতের পক্ষ থেকে এসব দাবির বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য আসেনি। ভারতীয় গণমাধ্যমে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার দাবি করা হলেও পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গোলা নিক্ষেপ করেছে জম্মুর পুঞ্চ-রাজৌরি এলাকার ভিম্বার গলিতে। এর জবাবে ধাপে ধাপে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ভারতীয় বাহিনী।

 

 

এদিকে, রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে জম্মু-কাশ্মীরে দুই নারী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। অন্যদিকে পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, ভারতীয় হামলায় তাদের অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছে এবং ১২ জনের বেশি আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছে। হামলার লক্ষ্য ছিল সুবহানুল্লাহ মসজিদ, কোটলি এবং মুজাফফরাবাদ—এই তিনটি বেসামরিক এলাকা।

ভারতীয় হামলার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, এই কাপুরুষোচিত হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের জাতি একতাবদ্ধ, এবং শত্রুর কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে, ভারতের হামলাকে 'যুদ্ধের পদক্ষেপ' হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি তুলে ধরার কথাও বলেন তিনি।

 

 

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামের অভিযানের ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের ৯টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। এতে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ও অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়নি বলে দাবি করা হয়। ভারতীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে বলা হয়, "ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে। জয় হিন্দ।"

এই সংঘাতের পেছনে মূল ঘটনা ছিল ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ ভারতীয় পর্যটকের নিহত হওয়া। ওই ঘটনার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় এবং একাধিক চুক্তি বাতিলের পাশাপাশি সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করা হয়। অবশেষে, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পর ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালায়।

এখন গোটা উপমহাদেশের নজর রয়েছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। সংঘাত আরও বাড়বে নাকি কোনো কূটনৈতিক সমাধানের দিকে যাবে, তা সময়ই বলে দেবে।

আঁখি

×