ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

এখনো বড় বাধা গ্যাস সংকট

পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার বাড়ার সম্ভাবনা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২৭, ৭ মে ২০২৫

পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার বাড়ার সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করা হচ্ছে

একক দেশ হিসেবে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশটির ভোক্তাদের কাছে বাংলাদেশী পোশাকের আলাদা চাহিদা রয়েছে। এ অবস্থায়  চীনে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা এখন নতুন উৎসের সন্ধানে অনুসন্ধানমূলক আলোচনা শুরু করেছেন। একইসঙ্গে, চীনা বিনিয়োগকারীরা ও বিশেষ করে টেক্সটাইল ও পোশাক খাতের বিনিয়োগকারীরা মার্কিন-চীন উত্তেজনার কারণে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করছেন।

ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসছে। বাংলাদেশী রপ্তানিকারকরা বলছেন, এ অবস্থায় ক্রেতারা তাদের কাছে জানতে চাইছেন সরকার এ বিষয়ে কী ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ব্যাপারে দেশের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত নতুন শুল্ক স্থগিত করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।  
উদ্যোক্তারা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক এ পরিস্থিতির মধ্যেও পোশাক রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব। এজন্য উৎপাদনের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও গ্যাস। এ ছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনায় নীতিগত সহায়তা বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, গ্যাস-নির্ভর কারখানাগুলো তাদের প্রয়োজনের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস পাচ্ছে। এই ধারা চলতে থাকলে বিশেষ করে জ্বালানি-নির্ভর খাতে নতুন বিনিয়োগ টানা কঠিন হবে।

মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ শেষ হতে চলেছে, এবং ভবিষ্যতের শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ব্র্যান্ড গ্যাপ ইনকরপোরেটেড চট্টগ্রামের এক রপ্তানিকারকের সঙ্গে অর্ডার সম্প্রসারণ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে। ২০২৪ সালে ওই প্রতিষ্ঠানের মোট চালানের ৪৫ শতাংশই গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই ক্রেতা চীন থেকে কিছু উৎপাদন সরিয়ে নিতে চাইছেন এবং আমাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছেন। টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, গত সপ্তাহে, দুইজন মার্কিন ক্রেতা যারা সাধারণত চীন থেকেই পণ্য সংগ্রহ করেন বাংলাদেশে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

তারা এখানে অর্ডার বাড়াতে আগ্রহী। এটি একটি ইতিবাচক বার্তা। বর্তমানে টিম গ্রুপ এটির রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। সম্প্রতি মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের পোশাকের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ ও অনুসন্ধান  বেড়েছে। যারা আগে থেকেই বাংলাদেশ থেকে পণ্য আনেন, তারাও এখন চীনের কিছু অর্ডার এখানে স্থানান্তরের কথা ভাবছেন। শিল্প নেতারা একমত চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর এ ধারা এখন প্রায় অনিবার্য, এবং যদি বাংলাদেশ জ্বালানি ও অবকাঠামো-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো সামলাতে পারে, তবে এটি থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারে।

এপ্রিলের শুরুতে, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক বসায়। চীনা পোশাকপণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চীন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও শুল্ক সাময়িকভাবে ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫২ শতাংশ করা হয়। পরে, চীন ছাড়া অন্য সব দেশের জন্য সেই শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এই পদক্ষেপ চীনের জন্য বড় ধাক্কা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এই শুল্কই বাংলাদেশের জন্য বাজারে বড় সুযোগ এনে দিতে পারে।
এ প্রসঙ্গে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)-এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মার্কিন-চীন বাণিজ্য সংঘাত চলতে পারে। এতে করে ক্রেতারা বিকল্প উৎস খুঁজতে বাধ্য হবেন এবং বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ভারত, পাকিস্তান বা ভিয়েতনাম কেন সেই বিকল্প নয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে চীনের বড় ধরনের বিনিয়োগ আছে, যা মার্কিন ক্রেতাদের সাবধানী করে তুলতে পারে। ভারতেও চীনের বিনিয়োগ আছে।

তবে পোশাক খাতে বাংলাদেশই সবচেয়ে শক্তিশালী বিকল্প। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শুল্কের কারণে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতে চীনের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস কোম্পানিগুলো বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন তাদের অন্যতম পছন্দের দেশ। বাংলাদেশ নিটওয়্যার মেনুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম  বলেন, গত দুই সপ্তাহে তিনজন চীনা ও একজন জাপানি বিনিয়োগকারী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

এদিকে, পোশাক খাতের উৎপাদন বাড়াতে জ্বালানি সংকট দূর করার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে দেশের জ্বালানি পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। বাণিজ্য উপদেষ্টা এসকে বশির উদ্দিন বলেন, এলএনজি অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা পূর্ণভাবে চালু হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে শিল্প খাত সাশ্রয়ী ও মানসম্পন্ন জ্বালানি পাবে।

×