
প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বেশি নজরদারি দরকার
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে নিরীক্ষকদের পক্ষ থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থব্যয় নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছিল। কিন্তু সেই অডিট আপত্তির নিষ্পত্তি না করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে প্রকল্প পরিচালক পলাতক থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির কাজ থমকে আছে।
এজন্য প্রকল্প গ্রহণকালে অনেক বেশি নজরদারি করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, মাতারবাড়ি প্রকল্পের পরিচালক সরকারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত। বর্তমানে তিনি পলাতক। দেখা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার সময় অডিট আপত্তি এসেছে ৬ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। কিন্তু এই আপত্তির বিষয়ে কোনো জবাব বা নিষ্পন্ন না করেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এগুলোই হচ্ছে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যা। প্রকল্প বাস্তবায়নকালে অনেক বেশি নজরদারি দরকার, না হলে প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম ও সমস্যা তৈরি হয়। তবে এই নজরদারিও যেন নামেমাত্র না হয়ে সৎ উদ্দেশ্যে ও সততার সঙ্গে হয় সেটাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
চলমান প্রকল্পে অনেক অনিয়ম হচ্ছে উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আজকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি হলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাস্তা পুনর্গঠন। দুর্নীতি দমন কমিশন সেখানে গিয়ে কিছু কিছু ব্যত্যয় দেখেছে। সেখানে দেখা গেছে সৌর বাল্ব একেকটি ক্রয় করা হয়েছে ৭০ হাজার টাকায়। এ ছাড়া একেকটি ল্যাপটপ কেনা হয়েছে ১ লাখ টাকায়। এটা নিয়ে তারা অনুসন্ধান করছে এবং মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকালে সার্বক্ষণিক নজরদারি দরকার।
উপদেষ্টা বলেন, পরিবীক্ষণ বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) শক্তিশালী করা হচ্ছে। এখন থেকে আইএমইডি চলমান প্রকল্পগুলোতে যাবে। আগে প্রকল্পগুলো নিয়ে আইএমইডি গতানুগতিক প্রতিবেদন দিত, কোনো ফলোআপ বা অ্যাকশন ছিল না। এই রিপোর্ট এবং মূল্যায়ন করে লাভ কি? এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রকল্পগুলো তদন্ত করা কেন সমস্যা হচ্ছে এবং দায়ী কারা তা খুঁজে বের করা হবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়সংবলিত ৯টি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২ হাজার ৭৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ৮১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৪৫ কোটি ৬ লাখ টাকা।
প্রকল্পগুলো হলো- বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের, ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প’, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্স অ্যান্ড হার্মফুল প্র্যাকটিসেস অ্যাগেইনস্ট চিলড্রেন অ্যান্ড ওমেন ইন বাংলাদেশ প্রকল্প’, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প।’
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প ‘গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; ‘ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (কম্পোনেন্ট ২ এবং ৩) (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প ও বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ‘ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট (বি-স্ট্রং) (ডিডিএম পার্ট)’ প্রকল্প।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার সেচ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রকল্প।’ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘উইকেয়ার ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (৩য় পর্যায়) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প।
এ ছাড়া, একনেক সভায় ‘ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ’ প্রকল্প; ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং ‘জাতীয় চিত্রশালা এবং জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র সম্প্রসারণ ও অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পসহ ৩টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এ ছাড়াও পরিকল্পনা উপদেষ্টার অনুমোদিত ১১টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেক সদস্যদের অবহিত করা হয়।
একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন; স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী; শিল্প ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক ও রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; মুক্তিযুদ্ধ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক ই আজম; সমাজকল্যাণ ও মহিলা-শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ; সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী; এবং যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।