
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ
দেশীয় উদ্ভিদের রস ব্যবহার করে বিকল্প ইঞ্জিন অয়েল তৈরি করে আলোচনায় এসেছেন নীলফামারীর ডিমলার অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাজী আশরাফ আলী। তাঁর উদ্ভাবিত ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে সফলভাবে মোটরসাইকেল চালানো সম্ভব হওয়ায় স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সাড়া ফেলেছে।
আশরাফ আলী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ইঞ্জিন অয়েলের প্রযুক্তিগত দিক সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। অবসরের পর নিজ উদ্যোগে গবেষণায় মনোনিবেশ করেন এবং দীর্ঘ সময় পরিশ্রম করে উদ্ভিদের নির্যাস থেকে বিকল্প ইঞ্জিন অয়েল তৈরিতে সাফল্য অর্জন করেন।
২০০৮ সালে তাঁর তৈরি অয়েল বাংলাদেশ জ্বালানি গবেষণা ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে (বিআরইআরআই) পরীক্ষিত হয়। প্রাথমিকভাবে অ্যাসিডের মাত্রা কিছুটা বেশি থাকলেও পরিশোধনের মাধ্যমে মানোন্নয়ন সম্ভব হয়। একই বছর তিনি এ উদ্ভাবনের পেটেন্ট গ্রহণ করেন।
স্থানীয় মোটরসাইকেল মেকানিক আনিসুর রহমান জানান, “এই তেল দিয়ে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চালিয়েছি, কোনো সমস্যা হয়নি। আধুনিক রিফাইনিং পদ্ধতি প্রয়োগ করলে এটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হতে পারে।”
ব্যবহারকারী কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, তেল ব্যবহারে ধোঁয়া তুলনামূলক বেশি হলেও ইঞ্জিনের ক্ষমতা ও স্থায়িত্ব সন্তোষজনক। তাঁদের অভিমত, যথাযথ প্রযুক্তির সহায়তায় এই তেল হতে পারে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই জ্বালানি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাইমুল হক বলেন, “ভেরেন্ডা জাতীয় উদ্ভিদের তেলে ইঞ্জিন ব্যবহারের উপযোগী উপাদান রয়েছে। তবে যথাযথ পরিশোধন ছাড়া তা ইঞ্জিনে কার্বন জমার আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।”
আশরাফ আলীর দাবি, বাজারের প্রচলিত ইঞ্জিন অয়েলের তুলনায় তাঁর উদ্ভাবিত তেল অর্ধেক খরচে উৎপাদন করা সম্ভব। বাণিজ্যিক পর্যায়ে উন্নীত করা গেলে এটি হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির একটি কার্যকর মাধ্যম।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো: নায়িরুজ্জামান বলেন, “এই উদ্ভাবন একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বিষয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।”
এই উদ্ভাবন এখন শুধু ব্যক্তিগত সাধনার সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।
মিরাজ খান