ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

সাংবাদিকদের খলিলুর রহমান

মিয়ানমারে নতুন প্রশাসনিক কাঠামোতে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি চায় ঢাকা

কূটনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২০, ৭ মে ২০২৫

মিয়ানমারে নতুন প্রশাসনিক কাঠামোতে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি চায় ঢাকা

খলিলুর রহমান

মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন যে প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি হচ্ছে সেখানে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি দেখতে চায় বাংলাদেশ। আরাকান আর্মিকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন   প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ দূত ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের  এ কথা বলেন।
রোহিঙ্গাদের দায়িত্বে থাকা বিশেষ দূত বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে করে আর নতুন রোহিঙ্গা না আসে। এ কথা আমরা খুব জোরের সঙ্গে আরাকান আর্মিকে জানিয়েছি। জাতিসংঘের মাধ্যমে তাদের যে কয়েকটি কথা আমরা জানিয়েছি সেগুলো হচ্ছে আরাকানে যে নতুন প্রশাসন তৈরি হচ্ছে, তার সব স্তরে আমরা রোহিঙ্গাদের দেখতে চাই। যদি সেটি তারা না করে, তবে সেটি হবে জাতিগত নিধনের একটি নিদর্শন। এটি আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না। আমরা এ কাজটি কখনো করব না।

এই কাজটি যদি তারা না করে, তাহলে তাদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল হবে।’ জাতিগত নিধন কোনো অবস্থাতে আমরা মানবো না। এটি আমাদের রেড লাইন জানিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এ ধরনের জাতিগত নিধন কোনোভাবেই সমর্থন করি না, এটা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় হোক। এটা আরাকান আর্মির জন্য একটি প্রথম পরীক্ষা। আমরা অপেক্ষা করছি এই পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হতে পারছে কি না।’
আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে কী জবাব পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশ্ন করেছি। জবাব পেলে আমরা বিচার-বিবেচনা করে দেখবো কী ধরনের জবাব পাচ্ছি। এখানে কোনো রাখঢাকা নেই। এটি সরাসরি প্রশ্ন। আপনি জাতিগত নিধনের পক্ষে অথবা বিপক্ষে।’
আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগের বিষয়ে মিয়ানমারের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা সার্বভৌম রাষ্ট্র। যার সঙ্গে ইচ্ছা তার সঙ্গে আমরা কথা বলব। কে কী বলল. তাতে কিছু  যায় আসে না। আমরা একটি স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করেছি এবং বাস্তবায়ন করছি।’
 এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আরাকান আর্মিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু তারাও তো কথা বলছে। তারা তো যুদ্ধবিরতির কথা বলছে। এ ছাড়া আরেকটি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। আমাদের সীমান্তের ওপারে এখন নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির।

আমাদের সার্বভৌম সীমান্ত আমাদেরই ব্যবস্থাপনা করতে হবে, রক্ষা করতে হবে, শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। এ জন্য ওপারে যেই থাক, তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখব। মিয়ানমার আর্মি যদি পারে,  আসুক তারা সীমান্তের ও পাশে। তাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ ছিল এবং সেটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুক। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব বলে তিনি জানান।
তিনি উল্লেখ করেন যে, এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে আসা এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা চিঠি দিয়েছে।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, জায়গাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আগে যারা এসেছিল, তারা বনবাদার কেটে এখানে পরিবেশগত একটি প্রভাব রেখেছিল। সেই আবার বনায়ন করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা না করে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।
রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, সব পক্ষ রাজি হলেই যে বাংলাদেশ মানবিক সাহায্য দেব এমন কোনো কথা নেই।
খলিলুর রহমান বলেন, আমরা সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের স্বার্থে আমরা যার সঙ্গে ইচ্ছা তার সঙ্গে দেখা করব। কে কী বলল যায়-আসে না। আমরা একটা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছি এবং সেটা বাস্তবায়ন করছি। মিয়ানমার আরাকান আর্মিকে একটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে দেখে কিন্তু তারাও কথা বলছে। তারা যুদ্ধবিরতির কথা বলছে।
কেন আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ প্রয়োজন তা তুলে ধরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সীমান্তের ওপারে এখন নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির। এটা তো আমাদের সীমান্ত এবং এটা আমাদের সার্বভৌম সীমান্ত। এই সীমান্ত আমাকে ম্যানেজ করতে হবে, রক্ষা করতে হবে, শান্তিপূর্ণভাবে রক্ষা করতে হবে। এটা একটা ক্রসবর্ডার। এজন্য ওপারে যেই থাক তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখব।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যদি ওই পাশে আসে আসুক। তাদের সঙ্গে আগে আমাদের যোগাযোগ ছিল। তারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুক, আমরা তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করব।
মানবিক করিডর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, শেষ অবধি আমরা দেখব সব পক্ষ রাজি কি না। রাজি হলেই যে আমরা মানবিক সাহায্য দেব তেমন কোনো কথা নেই। কারণ, আমাদের অন্যান্য বিষয় আছে।
তিনি আরও বলেন, আরাকানের যে নতুন কর্তৃপক্ষ তৈরি হয়েছে সেখানে আমরা রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব চাই। আমরা চাই, সেখানে রোহিঙ্গা যারা আছেন তাদের ওপর যেন কোনো অত্যাচার না হয়। তাদের বিরুদ্ধে যেন বৈষম্যমূলক আচরণ করা না হয়। তারা যেন আবার দলে দলে বাংলাদেশে না আসে। জাতিগত নিধন কোনো অবস্থাতেই আমরা মানব না। এটা আমাদের রেড লাইন।
‘যদি সেটা তারা না করে এটা হবে জাতিগত নিধন, যেটা কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। এই কাজটি যদি তারা না করে তাদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল হবে। এটা আরাকান আর্মির জন্য একটা টেস্ট।’ বলেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
মিয়ানমারের সেনাসহ ৩৪ নাগরিক ফেরত যাচ্ছে আজ ॥ স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপিসহ ৩৪ জন নাগরিককে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে আজ বুধবার। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে মিয়ানমারের বিশেষ বিমান যোগে এদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 
বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম ইমরুল হাসান জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জের ধরে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বিভিন্ন সময় পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল ৩৪ জন বিজিপি ও সেনাসহ সাধারণ নাগরিক। তারা বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। বুধবার মিয়ানমারের একটি বিমান কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। সেখানেই তাদের হস্তান্তর করা হবে বলে।

×