
ছবি: সংগৃহীত
পাহেলগাম জঙ্গি হামলা ও ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপের ঘোষণা যার মধ্যে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করাও রয়েছে এর পর থেকে পাকিস্তান আক্রমণাত্মকভাবে গুলি চালিয়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে আসছে।
গত ১০ দিনে লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি)-এর বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের একের পর এক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে, সীমান্ত পেরিয়ে গুলি চালানো এখন আর আগের মতো এক-দুইটি সেক্টরে সীমাবদ্ধ নেই। বরং, একযোগে একাধিক সেক্টরে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
আগে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন সাধারণত এক বা দুইটি এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকত। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এলওসি-তে নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর জম্মু ও কাশ্মীরে কিছুটা শান্তি ফিরে এসেছিল।
তবে সেনা কর্মকর্তাদের মতে, অতীতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো প্রায়শই পির পাঞ্জাল পর্বতমালার দক্ষিণাঞ্চলে বেশি দেখা যেত—এটি এলাকার ভূপ্রকৃতি ও অন্যান্য ভূগোলগত কারণের ফলাফল।
পাহেলগাম হামলা ও ভারতের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কূটনৈতিক পদক্ষেপের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই পাকিস্তান এলওসি বরাবর একাধিক সেক্টরে আক্রমণাত্মক গুলি চালিয়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে।
শুক্রবার রাতে পাকিস্তানি সেনারা কুপওয়াড়া, উরি ও আখনূরের বিপরীতে অবস্থিত পোস্ট থেকে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালালে ভারত ও পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে গুলি-বিনিময় ঘটে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে একটি সূত্র জানিয়েছে, “গত কয়েকটি আক্রমণাত্মক গুলি চালানোর ঘটনা পির পাঞ্জালের উত্তর ও দক্ষিণ দুই দিকেই একযোগে একাধিক সেক্টরে ঘটেছে এটি আগের রীতির থেকে কিছুটা ভিন্ন।”
এই ঘটনার মধ্যে কুপওয়াড়া (উত্তর কাশ্মীর) ও আখনূর (জম্মু অঞ্চল)-এর এলওসি অংশে প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হচ্ছে। জম্মু অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর পারগওয়াল সেক্টরেও গত সপ্তাহে গুলি চালানো হয় যেটি সচরাচর দেখা যায় না।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাকিস্তানি সেনারা যেসব এলাকায় ভূপ্রকৃতিগত সুবিধা পায়, মূলত সেসব সেক্টরেই বেশি আক্রমণাত্মক গুলি চালাচ্ছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, আগে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পেছনে মূল লক্ষ্য ছিল সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ করানো। তবে পাহেলগাম হামলার পর থেকে দেখা যাচ্ছে, এসব লঙ্ঘন আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিফলন এবং ভারতের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানোর কৌশল হিসেবে সামনে সারির সেনাদের ব্যস্ত রাখতে চাচ্ছে পাকিস্তান।
তবে সর্বশেষ গুলিগুলোর ক্ষেত্রে শুধুই ছোট অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে; এখনো আর্টিলারি পর্যায়ে পরিস্থিতি গড়ায়নি। যদিও সূত্র বলছে, পাকিস্তান মাঝারি মানের আর্টিলারি গান ও গুলি সংরক্ষণ করে রাখছে, ভবিষ্যতে সংঘাত আরও বাড়লে ব্যবহারের জন্য। ভারতীয় সেনারাও আর্টিলারি হামলা শুরু হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য ও পর্যাপ্ত গোলাবারুদসহ প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া, ভারতীয় সেনাবাহিনীর এলওসি বরাবর মোতায়েন অধিকাংশ আর্টিলারি রেজিমেন্ট ইতোমধ্যেই পুরনো ১০৫ মিমি গান বাদ দিয়ে ১৫৫ মিমি ক্যালিবার গান ব্যবহার শুরু করেছে সেনাবাহিনীর চলমান আর্টিলারি আধুনিকায়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। নতুন এই কামানগুলো পাহাড়ি এলাকায় টার্গেট আঘাত করার ক্ষেত্রে অধিক পরিসর ও শক্তিশালী প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম।
শহীদ