ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

দাবানল, মিসাইল আর আতঙ্কে সেনা সংকটে রিজার্ভদের মাঠে নামাচ্ছে ইসরায়েল

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ৪ মে ২০২৫

দাবানল, মিসাইল আর আতঙ্কে সেনা সংকটে রিজার্ভদের মাঠে নামাচ্ছে ইসরায়েল

ছবিঃ সংগৃহীত

একদিকে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, অন্যদিকে দাবানল—দু'দিক থেকেই ভয়াবহ বিপদের মুখোমুখি ইসরাইল। এর মধ্যে গাজায় চলমান যুদ্ধেও রয়েছে চরম মানবিক ও কৌশলগত সংকট। যুদ্ধ করার মতো পর্যাপ্ত সেনা না থাকায় অনেক সৈন্য রণাঙ্গন ছেড়ে পালিয়ে গেছে কিংবা সরাসরি যুদ্ধ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেনা সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী।

এই পরিস্থিতিতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়ন চালাতে এবার বড় পরিসরে রিজার্ভ সেনা মোতায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরাইল। সেনা সংকট এতটাই তীব্র যে, বাধ্য হয়েই এই পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

হিব্রু ভাষার দৈনিক ইয়েদিয়োথ আহরোনোথ জানিয়েছে, স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে কোনো যুদ্ধবিরতিতে যেতে ইসরাইল প্রস্তুত নয়। ফলে গাজায় আগ্রাসন অব্যাহত রাখতে রিজার্ভ সেনা ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় ইতোমধ্যেই ইসরাইলি বাহিনীর ৩৬তম ডিভিশনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্ভাব্য সমঝোতা না হলে আগামী সপ্তাহ থেকে আগ্রাসনের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।

সম্প্রতি বেশ কিছু রিজার্ভ অফিসার তাদের ইউনিটকে যেকোনো সময় যুদ্ধে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ২০২৫ সালের শুরুতে সিদ্ধান্ত ছিল, প্রতিটি রিজার্ভ সেনাকে আড়াই মাসের বেশি দায়িত্ব দেওয়া হবে না। কিন্তু গাজায় হামলার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় অন্তত দুটি ব্যাটালিয়নকে আবারো ডাকা হয়েছে, যার ফলে নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করা হয়েছে।

এ সময় ইসরাইলি সেনাপ্রধান হেরজি হালেভি বলেন, “রিজার্ভ বাহিনীর বড় সহায়তা ছাড়া সেনাবাহিনী তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে না।” তিনি রিজার্ভ ঘাটতিকে ‘গুরুতর সামরিক অপচয়’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং সেনাবাহিনীতে যোগ না দেওয়া আল্ট্রা-অর্থোডক্স (হারেদি) ইহুদিদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিও তোলেন।

জানা গেছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী জুনের শেষ নাগাদ প্রায় ২৪,০০০ হারেদি যুবককে খসড়া ড্রাফট নোটিশ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৩০০টি নোটিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। সরকারের কট্টর নীতির কারণে এই নির্দেশ এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি।

এদিকে চ্যানেল ১২, ওয়াইনেট, কানসহ বেশ কয়েকটি ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি নিরাপত্তা বৈঠকে সেনা সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। রোববার তার সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রিসভায় ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।

ইসরাইল এরই মধ্যে গাজার অভ্যন্তরে স্থল আগ্রাসন আরও বাড়িয়েছে এবং ফিলিস্তিনি ভূমির বড় অংশ দখলের চেষ্টা করছে। যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত ১৮ মার্চ তারা আবারো গাজায় হামলা শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এরপর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২,৩২৬ জন নিহত হয়েছেন। আর ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫২,৪০০ ছাড়িয়ে গেছে, যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এই পরিস্থিতিতে হাজার হাজার ইসরাইলি রিজার্ভ সেনা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কাছে যুদ্ধ থামানোর দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।

এরই মধ্যে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। পাশাপাশি গাজায় চালানো হামলার জন্য ইসরাইল এখন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

সূত্রঃ https://youtu.be/GHckfP9RmVQ?si=et-VmAW8Ku9304AK

ইমরান

×