ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র

এবার ইরানের আসল শক্তি দেখতে পাবে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ২১ এপ্রিল ২০২৫

এবার ইরানের আসল শক্তি দেখতে পাবে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের প্রতিরক্ষা ও সামরিক ক্ষমতার চিত্র বদলে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। শুধু সংখ্যায় বড় সেনাবাহিনীই এখন আর শক্তির মাপকাঠি নয়, বরং আধুনিক সামরিক বুদ্ধিমত্তা, গতিশীলতা এবং সর্বোচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর সক্ষমতাই হয়ে উঠেছে প্রধান হাতিয়ার। এই বাস্তবতায় ইরান সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক উন্নয়ন শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে।

সম্প্রতি ইরানের স্থলবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিউমার্স হেইদারী জানান, ইরান সেনাবাহিনীর কাছে এমন কিছু কৌশলগত অস্ত্র রয়েছে, যেগুলো এখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। কৌশলগত কারণেই এসব গোপন রাখা হয়েছে, তবে অস্ত্রগুলো সম্পূর্ণ কার্যকর এবং যেকোনো সময় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। এসব অস্ত্রের উল্লেখযোগ্য দিক হলো—অস্ত্রগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা চালিত।

হেইদারী জানান, ইরান এখন আর শুধুমাত্র একটি প্রতিরক্ষামূলক সামরিক বাহিনী নয়, বরং এটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর একটি পরাশক্তিতে রূপ নিচ্ছে। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ইরানের সামরিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সেই ধারাবাহিকতায়, এখন ইরান একটি গতিশীল, আধুনিক ও দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল স্থলবাহিনী গড়ে তুলেছে।

তিনি বলেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতাই আধুনিক সেনাবাহিনীর মূল শক্তি—যা আমরা অর্জন করেছি।” সীমান্ত নিরাপত্তার দিকেও ইরান অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। হেইদারীর ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ১০টি শক্তিশালী ডিভিশন মোতায়েন করা হয়েছে, যেগুলো গোয়েন্দা নজরদারি ও প্রতিরক্ষায় পুরোপুরি সক্ষম।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “এর অর্থ এই নয় যে ইরান সব হুমকি থেকে মুক্ত। বরং এটি প্রতিরোধমূলক প্রস্তুতির অংশ, যার মাধ্যমে স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।” এসব প্রস্তুতি শুধুমাত্র বাহ্যিক হুমকি নয়, বরং প্রযুক্তিগত ও সাইবার হুমকির প্রতিক্রিয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

গত বছরের শেষ তিন মাসে ইরান পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল এবং উপকূলীয় অঞ্চলে তিনটি বড় সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে। এসব মহড়ায় শুধু অস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা নয়, বরং সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া সময়, দ্রুত মোতায়েনের সক্ষমতা এবং সমন্বিত কৌশলগত অপারেশনগুলোও পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে প্রতিফলিত হয়েছে যে, ইরান প্রতিরক্ষার পাশাপাশি আক্রমণাত্মক প্রস্তুতিতেও মনোযোগী।

সাইবার যুদ্ধের প্রসঙ্গে হেইদারী বলেন, “সাইবার যুদ্ধ এখনকার বিশ্বের সবচেয়ে অদৃশ্য এবং বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র। ইরান এই হুমকিকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ইতোমধ্যে একটি বিশেষায়িত সাইবার ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এই ইউনিট অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে যেকোনো ডিজিটাল হামলার তাৎক্ষণিক জবাব দিতে সক্ষম।”

বিশ্ব রাজনীতিতে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যে প্রতিযোগিতা চলছে, সেখানে ইরান এখন দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। স্থল, সমুদ্র এবং আকাশপথে ইরানের সেনাবাহিনী এবং ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সমন্বয় ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে একটি সংহত ও শক্তিশালী কাঠামোতে রূপ দিয়েছে, যাতে একক বাহিনীর উপর নির্ভর না করে সমন্বিত শক্তিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে।

সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেছেন, “ইরান এখন আঞ্চলিকভাবে একটি নির্ভরযোগ্য এবং স্থিতিশীল সামরিক শক্তি। ইরানি সেনাবাহিনীর কাঠামোগত দৃঢ়তা, কৌশলগত প্রস্তুতি ও প্রযুক্তিগত আধুনিকতা অন্যান্য দেশের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।”

সব মিলিয়ে, ইরানের বর্তমান সামরিক কৌশল শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা বা হুমকি মোকাবেলার পরিকল্পনা নয়; এটি বৃহত্তর কৌশলগত ও রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ। যেখানে প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, গতিশীলতা এবং প্রতিরোধের সমন্বয়ে একটি আধুনিক সামরিক পরাশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

বিশেষ করে, এআই-চালিত গোপন অস্ত্রভাণ্ডার ইরানের এই সামরিক উত্তরণের সবচেয়ে রহস্যময় এবং শক্তিশালী দিক, যা ভবিষ্যতের যুদ্ধের বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও সামরিক ভারসাম্যের এমন এক সংবেদনশীল সময়ে ইরানের এই উত্তরণ নিঃসন্দেহে বিশ্বে নতুন বার্তা দিচ্ছে।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=quE3ZvVphKw

আবীর

×