ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

আজ ঢাকায় টিকফা বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি পোশাকে শুল্ক সুবিধা চাওয়া হবে

এম শাহজাহান

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি পোশাকে শুল্ক সুবিধা চাওয়া হবে

পোশাকে শুল্ক সুবিধা চাওয়া হবে

দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি-‘টিকফা’র আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত তুলা থেকে তৈরিকৃত পোশাক সেদেশেই বিক্রি করতে চান এদেশের উদ্যোক্তারা। আর এসব পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চাওয়া হবে। এর বাইরে এলডিসি উত্তরণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায়-ডব্লিউটিওতে বাণিজ্য সুবিধা পেতে মার্কিন সমর্থন চাবে সরকার।   দুই দেশের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আজ বুধবার  ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হবে  টিকফার সপ্তম বৈঠক। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবির মুখে অতি সম্প্রতি সে দেশ থেকে আমদানি করা তুলা বাংলাদেশে কোনো ফিউমিগেশন বা পুনঃপরীক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। টিকফা ফোরামের বৈঠককে কেন্দ্র করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তটিও মার্কিনীদের স্বার্থ সংরক্ষণমূলক। এর ফলে দেশটি থেকে বাংলাদেশে তুলা আমদানি বাড়লে এতে মার্কিন ব্যবসার সমৃদ্ধি ঘটবে এদেশে। অন্যদিকে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করা হয়। মার্কিন তুলা থেকে উৎপাদিত পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে এ খাতের বিনিয়োগকারীদের।

আর এতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া গেলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা হারায় বাংলাদেশ। এর পর টিকফা ফোরাম এবং এর বাইরে দেশটির সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনা ও বৈঠকে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের দাবি করা হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখন বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানি হবে। এতে বাংলাদেশে রপ্তানি বাড়বে দেশটির। তুলা রপ্তানির বিপরীতে পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হবে টিকফা বৈঠকে।

আজকের  বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক,  জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর, কৃষি, পররাষ্ট্র, তথ্য প্রযুক্তি, শ্রম, শিল্প, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করবেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্বে থাকবেন ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী ব্রেন্ডন লিঞ্চ। তাঁর নেতৃত্বে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের একটি সরকারি প্রতিনিধি দল বৈঠকে যোগ দেবে। এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত থাকবেন। সূত্র বলছে, আগের বৈঠকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেকোনো বিষয় চাপিয়ে দেওয়া কিংবা কঠোর সমালোচনা করা হলেও এবার সেই অবস্থান সরে এসেছে দেশটি।

বরং যুক্তরাষ্ট্র এখন চীন, জাপান, ভারত, কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে পূর্বের বৈঠকগুলোর বেশকিছু বিষয় তারা সামনে আনবেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কিভাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে টিকফা বৈঠকে আলোচনা করা হবে। ইতোমধ্যে বেশকিছু বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা সেই বিষয়গুলো বৈঠকে উপস্থাপন করব। তিনি বলেন, এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ)  থেকে উত্তরণের পরও বাংলাদেশ ডব্লিউটিওর বাণিজ্য সুবিধা আরও কয়েক বছর অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাবটি যাতে অনুমোদিত হয়, সে লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চাওয়া হবে।

টিকফা ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই ইস্যুটিতে জোর দেওয়া হবে। জানা গেছে, এবারের টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশ আরও যেসব ইস্যুকে গুরুত্ব দিচ্ছে সেগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা, যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন তহবিল থেকে অনুদান পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নাম তালিকাভুক্তিকরণ এবং এনার্জি খাত ছাড়াও বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং ও শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশের তুলা রপ্তানি বাড়াতে চায় বাংলাদেশে। এ ছাড়া মেধাস্বত্ব অধিকার, মানসম্পন্ন সনদ অবকাঠামোর জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, শ্রম সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত ডাটা সুরক্ষা আইন, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফডিএ) বাংলাদেশী ওষুধ নিবন্ধন পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা, বাংলাদেশের বাদাম রপ্তানির ওপর শুল্ক কমানো এবং বাংলাদেশের বীজ বাজারে মার্কিন প্রবেশাধিকারের জন্য বীজ আইন সহজীকরণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র।  
এদিকে, ইউএসটিআরের তথ্যমতে, এই বৈঠকে বিনিয়োগের সমস্যা সম্পর্কিত আলোচনায় আমেরিকান কোম্পানিগুলোর পাওনা পরিশোধ এবং মুনাফা প্রত্যাবাসনে বিলম্ব বিড়ম্বনার সুরাহা চাইবে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও)  নোটিফিকেশন ইস্যুতে শুল্কস্তর এবং বিভিন্ন বিষয়ে চেকলিস্ট সমস্যা সমাধানে অগ্রগতিও মূল্যায়ন করবেন ইউএসটিআর প্রতিনিধিরা। সম্প্রতি দেশের বিদ্যুৎ জ্বালানিসহ চার খাতে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের পাশাপাশি আকাশ পরিবহন, ডিজিটাল অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করতে তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটা, জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি, শেভরন, এক্সনমবিল এবং উড়োজাহাজ কোম্পানি বোয়িংয়ের প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।  
উল্লেখ্য, টিকফা স্বাক্ষর হয় ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। এর আগে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিফা) নামে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশকে চুক্তি স্বাক্ষরের তাগিদ দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। টিফাই পরে টিকফা হয়।  চুক্তিতে বলা হয়, বছরে কমপক্ষে একবার এ ফোরামের বৈঠক হবে। সে অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় প্রথম ও ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় বৈঠক হয়। গত দশ বছরে ৬টি বৈঠক হলেও দৃশ্যমান  কোনো ফল দেখা যায়নি। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরই টিকফা কার্যকরে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারের বৈঠকটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

×