ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

পশ্চিমা ও ইহুদিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইসলামি ঐক্যের আহ্বান ইরানের সুন্নি আলেমদের

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ৩০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩৯, ৩০ জুন ২০২৫

পশ্চিমা ও ইহুদিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইসলামি ঐক্যের আহ্বান ইরানের সুন্নি আলেমদের

ইরানের প্রখ্যাত সুন্নি ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেমরা সম্প্রতি এক বিবৃতিতে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদি-জাতিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন। এই বিবৃতিকে কেবল রাজনৈতিক হুঁশিয়ারি নয়, বরং ইসলামের বিজয়-চেতনায় উজ্জীবিত একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা বলেও বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে ইরানের এই সুন্নি নেতারা সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনকে “অবিশ্বাসের (কুফরের) বিরুদ্ধে ইসলামের এক ঐতিহাসিক বিজয়” হিসেবে উল্লেখ করেন। তাদের ভাষায়, “এটি কেবল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নয়, বরং সমগ্র উম্মাহর বিজয়। এই বিজয় বিশ্বব্যাপী অহংকার ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইসলামের চেতনাকে শক্তিশালী করেছে।”

ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে আলেমরা এটিকে “ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চাপিয়ে দেওয়া এক ক্যানসারসস টিউমার” বলে অভিহিত করেন। তারা আল-কুদসের অব্যাহত দখল ও ফিলিস্তিনিদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন চালানো অপরাধের কঠোর নিন্দা জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, “এই শাসনব্যবস্থার অস্তিত্ব নিরীহ মানুষের রক্তপাতের ওপর নির্ভরশীল।”

গত ৭ অক্টোবর গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর শুরু করা 'আল-আকসা ফ্লাড অপারেশন'-এর প্রসঙ্গ টেনে আলেমরা বলেন, এই সাহসী তরুণ যোদ্ধারা ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা ক্ষমতার ‘মিথ’ ভেঙে দিয়েছে এবং শত্রুর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। তারা বলেন, এই প্রতিরোধ ছিল শুধু এক প্রজন্মের বিদ্রোহ নয়, বরং ইতিহাসের ধারাবাহিকতা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শহীদ সাইয়েদ হাসান নাসরাল্লাহ, শহীদ সাইয়েদ হাশেম সাফি আল-দিন, শহীদ ইসমাইল হানিয়া ও শহীদ ইয়াহিয়া আল-সিনওয়ারের মতো প্রতিরোধের মহান নেতারা জীবন দিয়েছেন কেবল আল-আকসা মসজিদ ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে। তাদের টার্গেট করে চালানো গুপ্তহত্যা ছিল একটি কৌশলগত চক্রান্ত, যার পেছনে ইসরায়েল ও পশ্চিমা মিত্রদের সম্মিলিত মদদ ছিল।

ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আগ্রাসনেরও তীব্র নিন্দা জানান আলেমরা। তারা বলেন, “এই হামলাগুলো প্রতিরোধ অক্ষের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের অংশ। ইহুদি ও মার্কিন জোট ভুল করে ভেবেছিল, তারা ইরানকে আঘাত করে ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে দুর্বল করে ফেলবে। কিন্তু তাদের সেই ভুল ধারণাই আজ তাদের কৌশলগত পরাজয়ের কারণ হয়েছে।”

আলেমরা সতর্ক করে বলেন, এ লড়াই আর কেবল ইরানের একক যুদ্ধ নয় এটি পুরো মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে এক সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। তাদের ভাষায়, “এটি এখন আর কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, বরং একটি সভ্যতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এটি ইসলামের অস্তিত্বের লড়াই।”

পবিত্র কুরআনের আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়ে তারা মুসলিম বিশ্বের নেতা, চিন্তাবিদ ও তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান যে, “ইসলামের মর্যাদা ও আল-কুদসের পবিত্রতা রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এটি আজ কেবল রাজনৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং ধর্মীয় ও নৈতিক বাধ্যবাধকতা।”

বিবৃতির শেষাংশে তারা বলেন, “আমরা, ইরানের সুন্নি আলেম ও বুদ্ধিজীবীরা, পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করছি ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। এখনই সময়, ইসলামি বিশ্বকে শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়চিত্ত হয়ে উঠে দাঁড়াতে হবে।”


এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা তুঙ্গে এবং মুসলিম বিশ্বের ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চিত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ইরানের সুন্নি আলেমদের এই ঐক্যের ডাক মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও নৈতিক অঙ্গনে একটি স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিয়েছে এই লড়াই শুধু একটি ভূখণ্ড বা রাষ্ট্রের নয়, এটি একটি আদর্শের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম।

 

 


সূত্র:Tehran Times

আফরোজা

×