ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

এবার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের হুমকি পুতিনের, নিশানায় ইউক্রেন ও ইউরোপ

প্রকাশিত: ০০:৫৭, ২ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ০০:৫৮, ২ আগস্ট ২০২৫

এবার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের হুমকি পুতিনের, নিশানায় ইউক্রেন ও ইউরোপ

রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’ ইউরোপজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এবার এই অস্ত্র বেলারুশে মোতায়েনের ঘোষণা দিয়ে নতুন করে হুমকির বার্তা দিলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার জানান, মস্কো তাদের সর্বাধুনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’-এর উৎপাদন শুরু করেছে এবং চলতি বছরের মধ্যেই এটি প্রতিবেশী বেলারুশে মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পদক্ষেপ ইউক্রেনসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য একটি নতুন নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে ভ্যালাম দ্বীপে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলিয়াকসান্দার লুকাশেঙ্কার সঙ্গে বৈঠকে পুতিন বলেন, বেলারুশে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের জন্য উপযুক্ত স্থান ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ‘‘প্রস্তুতির কাজ চলছে এবং আমাদের আশা, বছরের শেষ নাগাদ এ কাজ সম্পূর্ণ হবে।’’ তিনি আরও জানান, ওরেশনিকের প্রথম ব্যাচ এরই মধ্যে উৎপাদিত হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর সেবায় যুক্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ‘ওরেশনিক’ শব্দের অর্থ হ্যাজেল নাট গাছ। রাশিয়া প্রথমবারের মতো এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ২০২৪ সালের নভেম্বরে, ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরের একটি কারখানায় হামলা চালায়। ওই কারখানাটি সোভিয়েত আমলে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করত। তিন ঘণ্টা ধরে বিস্ফোরণ চললেও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

দিনিপ্রোর হামলার পর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ওরেশনিককে ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে উল্লেখ করে দাবি করে, মাত্র ১১ মিনিটে এটি পোল্যান্ডের একটি বিমানঘাঁটিতে এবং ১৭ মিনিটে ন্যাটোর সদর দপ্তর ব্রাসেলসে পৌঁছাতে সক্ষম।

পুতিন নিজেও ওরেশনিকের সক্ষমতার প্রশংসা করে বলেন, এটি একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে, যেগুলো ঘণ্টায় ম্যাক-১০ গতিতে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। তাঁর মতে, একাধিক ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সম্মিলিত প্রচলিত হামলাও পারমাণবিক হামলার মতো ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

তবে সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ওরেশনিকের প্রকৃত কার্যক্ষমতা এখনো প্রমাণিত নয় এবং এর সামর্থ্য রাশিয়ান প্রপাগান্ডার অংশ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। গত জুনে এক রিপোর্টে দাবি করা হয়, একটি পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হয় এবং অপ্রমাণিত ফুটেজে দেখা যায়, এটি কাজাখস্তানের আকাশে ভেঙে পড়ছে। এ ঘটনা তদন্তে নামে আসতানার কর্তৃপক্ষ।

পশ্চিমাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি

পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে পুতিন জানান, যদি ইউক্রেনকে দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালাতে সহায়তা করা হয়, তবে মস্কো ইউক্রেনের ন্যাটো মিত্রদের বিরুদ্ধেও ওরেশনিক ব্যবহার করতে পারে।

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীর প্রধান জানিয়েছেন, ওরেশনিক পারমাণবিক এবং প্রচলিত উভয় ওয়ারহেড বহন করতে পারে এবং এর পাল্লা এমন যে, এটি পুরো ইউরোপকে আঘাত হানতে সক্ষম।

প্রসঙ্গত, ৫০০ থেকে ৫,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার মাঝামাঝি দূরত্বের এসব ক্ষেপণাস্ত্র সোভিয়েত আমলের একটি চুক্তির আওতায় নিষিদ্ধ ছিল, যা ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পরিত্যাগ করে।

বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র ও যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি

গত বছর পুতিন ও লুকাশেঙ্কার মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি সই হয়, যার আওতায় রাশিয়া বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের সম্ভাবনাও রাখে। এটি এমন সময়ে হয়েছে, যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এবং পশ্চিমা দেশের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনার পটভূমিতে মস্কো তার পারমাণবিক নীতি সংশোধন করে।

এই নতুন পরিপ্রেক্ষিতে বেলারুশকে রাশিয়ার পারমাণবিক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হয়। ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা লুকাশেঙ্কা রাশিয়ার আর্থিক সহায়তা ও রাজনৈতিক সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। তিনি ২০২২ সালের গোড়ার দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সময় নিজ দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেন এবং কিছু কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রও সেখানে স্থানান্তরিত হয়।

রাশিয়া এখনো বেলারুশে ঠিক কতগুলো পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে, তা জানায়নি। তবে লুকাশেঙ্কা গত ডিসেম্বরে জানান, কয়েক ডজন অস্ত্র সেখানে রাখা হয়েছে।

বেলারুশের ১,০৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ইউক্রেন সীমান্ত থাকার কারণে, এসব অস্ত্র সেখানে মোতায়েন হলে রুশ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র সহজেই ইউক্রেনের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারবে। একই সঙ্গে এটি পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের ন্যাটো সদস্যদের ওপর রাশিয়ার হামলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে।

পুতিন স্বাক্ষরিত সংশোধিত পারমাণবিক নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাশিয়া এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বা অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করা হলে, কিংবা প্রচলিত অস্ত্রের মাধ্যমে রাশিয়া বা বেলারুশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়লে মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে।

ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন এবং বেলারুশে মোতায়েন ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে। এর মাধ্যমে শুধু ইউক্রেন নয়, পুরো ইউরোপের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে। রাশিয়ার ক্রমাগত আগ্রাসী অবস্থান এবং পারমাণবিক নীতির নতুন ব্যাখ্যা পশ্চিমা বিশ্বকে কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্ব নেতৃত্ব কী ভূমিকা নেয়।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/ynuxjtp

আফরোজা

×