
কিডনির রোগ সাধারণত নীরবে বাড়ে। অনেক সময় উপসর্গ দেখা দেয় তখনই, যখন রোগ অনেকটাই জটিল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অথচ কিডনি দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা বর্জ্য নিষ্কাশন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, শরীরের তরলমাত্রা সামঞ্জস্য এবং নানা গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এই অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই আগেভাগেই কিডনি পরীক্ষা করানো ও সতর্ক থাকা জরুরি,বিশেষ করে যারা উচ্চঝুঁকিতে আছেন।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক কিডনি সুস্থ আছে কি না তা বোঝার উপায়, কোন উপসর্গগুলোর দিকে খেয়াল রাখা জরুরি এবং কী কী পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা যায়।
কিডনির রোগ কী?
যেকোনো শারীরিক সমস্যা, যা কিডনির স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত করে, তাকে কিডনির রোগ বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
কিডনি ইনফেকশন
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ (Chronic Kidney Disease বা CKD)
কিডনি স্টোন
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস (কিডনির ফিল্টারে প্রদাহ)
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (একটি বংশগত রোগ)
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ধূমপান, এবং পারিবারিক ইতিহাস—এইসব বিষয় কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি।
কেন কিডনির যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ?
কিডনি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে ফেলে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন তৈরি করে এবং রক্তে লোহিত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। এটি ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখে এবং অতিরিক্ত তরল শরীর থেকে বের করে দেয়।
কিন্তু কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে এই প্রতিটি কার্যক্রমেই সমস্যা দেখা দেয়। কিডনির রোগ বিশ্বব্যাপী বাড়ছে, এবং এটি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে তোলে। কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পেলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আরও জটিল হয়ে ওঠে। এমনকি ক্যানসার ও ডিমেনশিয়ার মতো অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী অসুখের আশঙ্কাও বাড়ে। যদি এটি নজরদারির বাইরে চলে যায়, তাহলে কিডনি ফেলিওর পর্যন্ত হতে পারে—যার পর ডায়ালাইসিস বা প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্লান্ট) ছাড়া বিকল্প থাকে না।
কোন উপসর্গগুলো কিডনির অসুস্থতার ইঙ্গিত দিতে পারে?
প্রথমদিকে কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। কিন্তু নিচের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হওয়া উচিত:
প্রসাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
পা ও গোঁড়ালি ফুলে যাওয়া
ওজন কমে যাওয়া ও ক্ষুধামান্দ্য
প্রসাবে রক্ত দেখা বা ফেনা ফেনা প্রসাব
ত্বক শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত হওয়া
ঘুমের সমস্যা
শ্বাসকষ্ট
চোখের চারপাশে স্থায়ী ফোলাভাব
পেশিতে খিঁচুনি
কীভাবে কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন?
উপরে উল্লেখিত উপসর্গ দেখা দিলে বা আপনার যদি ঝুঁকির কোনো কারণ থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কিডনির কার্যকারিতা নির্ণয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা রয়েছে:
সিরাম ক্রিয়েটিনিন (Serum Creatinine): রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ মেপে কিডনির কার্যকারিতা বোঝা যায়।
সিস্টাটিন সি (Cystatin C): আরও সংবেদনশীলভাবে কিডনির অবস্থা জানায়।
ই-জিএফআর (Estimated Glomerular Filtration Rate): কিডনি রক্ত কতটা ভালোভাবে ছেঁকে ফেলছে, তা নির্ণয় করে।
ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন (BUN): ইউরিয়ার মাত্রা দেখে কিডনির অবস্থার ইঙ্গিত মেলে।
ইউরিন অ্যানালাইসিস (Urinalysis): প্রসাবে সংক্রমণ বা অন্য অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
ইউরিন অ্যালবুমিন-ক্রিয়েটিনিন অনুপাত (uACR): প্রসাবে প্রোটিনের উপস্থিতি যাচাই করা হয়।
কিডনি ভালো রাখতে যা করবেন
নিয়মিত পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত পানি পান, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকা,এই সবই কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3ns5xyjm
আফরোজা