ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ছেলে-মেয়ের সাথে থাকার জায়গা হলো না মায়ের

আব্দুর রাজ্জাক বাপ্পী, ঠাকুরগাওঁ

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১৮ মে ২০২৫

ছেলে-মেয়ের সাথে থাকার জায়গা হলো না মায়ের

ছবি: জনকন্ঠ

আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে, অন্নদামঙ্গলের এই চরণটি সত্যি হৃদয়কে স্পর্শ করার মতো। মা তো এমনি হয়। এমন এক মমতাময়ী মা হচ্ছেন গোলেছা বেগম। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভূল্লী থানা আওতাধীন ১৮ নং শুখান পুখরী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে দেখা মিলেছে এই মায়ের।

গোলেছা বেগন (৭০)মৃত অছিম পরামানিকের স্ত্রী। ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের জননী এই গোলেছা বেগম।

কষ্টের কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে আমি আমাদের সন্তানদের বড় করেছি। সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। শুরুতে সবাই ভালো ব্যবহার করলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে সবার কাছে বোঝা হয়ে যাই। অভাবের সংসার হওয়ার কারনে জায়গা-জামি করতে পারিনি। তাই প্রতিনিয়ত কথা শোনাতো ছেলে ও ছেলের বউয়েরা। তারা প্রত্যেকে আলাদা করে বাড়ি করেছে। বয়স হওয়ার কারনে একজন আরেক জনের বাড়িতে গিয়ে থাকার কথা বলতো। কিন্তু আমার তো বয়স হয়েছে। কেউ আমাকে রাখতে রাজি না। পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি।

মেয়েদের বাড়িতে গিয়ে কিছু দিন থাকলেও অভাবের সংসার তাদের, তাই সেখান থেকে চলে আসি। আসার পর সবাইকে বলি আমি আলাদা থাকবো, আলাদা রান্না করে খাবো শুধু তোমরা আমাকে একটু থাকার জায়গা দাও। কিন্তু তাতেও মন গলেনি  পাষান ছেলেদের, সবাই জানিয়ে দেয় তাদের যে টুকু জায়গা আছে সেটা ওদের নিজেদের লাগবে। কোনো জায়গা না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেই রাস্তার পাশে ছোট ঘর তুলে সেখানে থাকবো। কিন্তু কাছে  তেমন কোন জায়গা না থাকার কারনে, সেখানেও থাকা হলো না। সব শেষে ছোট ভাইয়ের কাছে গিয়ে একটু জায়গা দাবি করি যেখানে একটা ছোট ঘর তুলে কোনোমতো মাথা গুজতে পারবো। ভাই জায়গা দিতে রাজি হলেও জানিয়ে দেয়, সে ঘর উঠানোর কোনো খরচ দিতে পারবে না।

গোলেছা বেগম জানান বয়স ৭০ এর অধিক হওয়ার কারনে তিনি বয়স্কভাতা পেতেন, পরে সেই টাকা দিয়ে কয়টা টিন এনে কোনোমতে থাকার জায়গা করেন। তিনি বলেন আমি যে বয়স্কভাতার টাকা পাই সেটা দিয়ে কোনোমতে দিন পার করতেছি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে সেই ঘরটিতে  থাকা গেলেও সামনে বর্ষাকাল এলে ঘরের চারপাশ দিয়ে পানি আসবে ভিতরে এবং ঘরের মেঝেতে মাটি না থাকার ফলে সেখানেও পানি জামতে পারে। তখন সেই ঘরে গোলেছা বেগমের থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।

বৃদ্ধা এই মা বলেন, সরকারী কোনো অনুদানের মাধ্যমে আমার ঘরটা যদি ঠিক করে দেওয়া হয় এবং সরকারী যেসব সুযোগ সুবিধা আছে সেগুলো যদি আমাকে দেওয়া হয়, তাহলে হয়তো দুই বেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবো।

মুমু

×