ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিমানে ফোন ‘এয়ারপ্লেন মোডে’ না রাখলে আসলে কী হয়? জেনে নিন বাস্তবতা

প্রকাশিত: ১২:৪১, ১৮ মে ২০২৫

বিমানে ফোন ‘এয়ারপ্লেন মোডে’ না রাখলে আসলে কী হয়? জেনে নিন বাস্তবতা

ছবিঃ সংগৃহীত

বিমান উঠলেই কেবিন ক্রুদের কণ্ঠে শোনা যায় পরিচিত নির্দেশ—“আপনার মোবাইল ফোনটি দয়া করে এয়ারপ্লেন মোডে চালু করুন।” এই নির্দেশ অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে মানেন, আবার কেউ কেউ ভাবেন—এটা কি আদৌ জরুরি?

পাইলট ও ফ্লাইট প্রশিক্ষক গ্যারি কক্স, যিনি ৭,০০০ ঘণ্টার বেশি আকাশে ওড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, সরাসরি বলেন, “এতে আসলে কিছুই হয় না।” তবে এটাও বলেন, ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখা একটি শিষ্টাচার, যা অন্যদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য মেনে চলা উচিত।

টেকঅফের সময় মোবাইল ফোনের ‘মশার ডাক’?

অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন সেনা ও পাইলট পার্চপয়েন্ট জানান, যদিও ফোন বিমানের প্রযুক্তি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে না, কিন্তু যখন একাধিক ফোন একসঙ্গে মোবাইল টাওয়ারের সিগন্যাল খোঁজে, তখন তা পাইলটদের হেডসেট যোগাযোগে বিরক্তিকর ‘বাজিং’ শব্দ তৈরি করতে পারে। এটি এমন একরকম শব্দ, যেটা টেকঅফ বা ল্যান্ডিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

এই সময়েই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে, তাই পাইলটদের স্পষ্ট ও নিরবিচারে যোগাযোগ থাকা অত্যন্ত জরুরি।

তবুও নিয়ম কেন এত কঠোর?

১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (FCC) বিমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়, কারণ তৎকালীন প্রযুক্তি বিমান যন্ত্রপাতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারত। তবে ২০১৩ সালে প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে এই নিয়ম নতুনভাবে বিবেচনা করা হয় এবং ফোন এয়ারপ্লেন মোডে চালু রাখার শর্তে তা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।

একই বছরে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা (IATA) জানায়, ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৯টি সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের ঘটনা রিপোর্ট হয়েছে।

ইউরোপে কল করতে পারেন, কিন্তু আমেরিকায় নয়

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন বিমানে ফোনে কল ও টেক্সট করার অনুমতি দিচ্ছে, কারণ তারা বিমানের ভেতরে ‘পিকোসেল’ নামের ক্ষুদ্র মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করছে, যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংযোগ বজায় রাখে।

কিন্তু আমেরিকায় এখনো এ ধরনের প্রযুক্তি অনুমোদিত নয়। কারণ, তাদের ৫জি ফ্রিকোয়েন্সি বেশি এবং তা বিমানের প্রযুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। তাই এফএএ (FAA) এখনো যাত্রীদের জন্য ‘এয়ারপ্লেন মোড’ বাধ্যতামূলক করে রেখেছে।

নিয়ম ভাঙলে কী শাস্তি হয়?

যদিও কাউকে এ কারণে জেলে যেতে হয়নি, তবুও শাস্তির উদাহরণ আছে। যেমন, ২০১৬ সালে এক ব্রিটিশ যাত্রী ৬০০ ডলারের বেশি জরিমানা গুণেছিলেন, শুধু ফোন মোড নিয়ে নিয়ম না মানার জন্য। ২০১৮ সালে এক যাত্রীকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়, কারণ তিনি কেবিন ক্রুর সঙ্গে এ বিষয়ে তর্ক করছিলেন।

তাহলে উপকার কী?

ফোনটি এয়ারপ্লেন মোডে রাখলে শুধু বিমানের নিরাপত্তাই নয়, আপনার নিজের উপকারও হয়। ফোন বারবার সিগন্যাল খুঁজে বেড়ায় না, ফলে ব্যাটারির সাশ্রয় হয়। আর সাময়িকভাবে ডিজিটাল জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াও হতে পারে মানসিক বিশ্রামের একটা সুযোগ।

তাই পরবর্তীবার যখন কেবিন ক্রু বলবেন, “ফোনটা প্লিজ এয়ারপ্লেন মোডে দিন,” তখন মনে রাখবেন—এটা শুধু নিয়ম মানা নয়, বরং সবার জন্য একটু স্বস্তি নিশ্চিত করা।

 

মারিয়া

×