ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজায় ইসরায়েলের নতুন সামরিক অভিযানের নাম কী, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হওয়ার পরপরই কেন ঘোষণা?

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ১৮ মে ২০২৫; আপডেট: ১৫:৪০, ১৮ মে ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলের নতুন সামরিক অভিযানের নাম কী, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হওয়ার পরপরই কেন ঘোষণা?

ছবিঃ সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইজরায়েল নতুন এক সামরিক অভিযান চালু করেছে, যার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন গিদিয়নের রথ’। এই অভিযান শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করে দেশে ফিরে গেছেন।

এই অভিযান কেন শুরু হলো?
ইজরায়েল বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য হলো গাজায় হামাসের হাতে থাকা ইজরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা এবং গাজার ওপর থেকে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে দেওয়া। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে। যুদ্ধবিমান, ট্যাংক আর হাজার হাজার সেনা এখন গাজার অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে।

‘গিদিয়নের রথ’ নামের পেছনে গল্পটা কী?
এই নামটি নেওয়া হয়েছে বাইবেলের একজন যোদ্ধা, গিদিয়নের নাম থেকে। তিনি ছিলেন এমন এক নেতা, যিনি অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে এক বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন। ইজরায়েল এই নাম দিয়ে বোঝাতে চাইছে—তারা সংকল্পবদ্ধ, এবং বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কী?

  • গাজার ভিতরে ঢুকে কৌশলগত এলাকাগুলো দখলে নেওয়া
  • বাসিন্দাদের গাজার উত্তরের এলাকা থেকে দক্ষিণে সরিয়ে দেওয়া
  • মানবিক ত্রাণ সহায়তা যেন হামাসের হাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা
  • হামাসের ওপর চাপ বাড়িয়ে জিম্মিদের মুক্ত করা
  • ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, "এটা হবে খুব তীব্র ও স্থায়ী অভিযান।"

গাজার মানুষ কোথায় দাঁড়িয়ে?
গত ২৪ ঘণ্টায় ইজরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৫০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অনেকেই নারী ও শিশু। হাসপাতালে জায়গা নেই। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বহু প্রাণ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইজরায়েল ফের হামলা শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩,০০০ মানুষ মারা গেছেন। আর পুরো যুদ্ধজুড়ে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ৫৩,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ।

আর ট্রাম্প কী বললেন?
আবুধাবিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, "গাজায় মানুষ ক্ষুধার্ত। এটা আমাদের দেখতে হবে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।"
তবে তিনি আবারো পুরনো একটি পরিকল্পনার কথা তোলেন—গাজাকে একটি ‘ফ্রিডম জোন’ বানিয়ে ব্যবসা, পর্যটন ও উন্নয়নের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। এই পরিকল্পনার সমালোচকরা বলছেন, বাস্তবতা থেকে এটা অনেক দূরের কথা।


এই যুদ্ধ আর রক্তপাত থামানোর জন্য এখন সবচেয়ে বেশি দরকার—মানবতা। লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন, অনাহারে, নিরাপত্তাহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। শুধু জিম্মি উদ্ধারে নয়, মানুষের জীবন রক্ষায়ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে।

যুদ্ধের নেপথ্যে যারা মারা যাচ্ছে, তারা শুধু পরিসংখ্যান নয়। তারা মা-বাবা, ভাইবোন, শিশু আর স্বপ্নভরা মানুষ। শান্তি যেন কেবল কূটনৈতিক শব্দ না থাকে—তা যেন বাস্তব হয়, এই প্রার্থনা আমাদের সবার।

তথ্যসূত্রঃ https://indianexpress.com/article/world/gideons-chariots-israel-gaza-military-operation-hostages-trump-10012322/

মারিয়া

×