
ছবি : সংগৃহীত
ছোটদের (শিশুদের) পেটে গ্যাস হওয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা, বিশেষ করে ০–৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে। এটি সাধারণত হজমজনিত সমস্যা, খাবারের অভ্যাস বা পেটের ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকা জানান, এর পেছনে বেশ কিছু দৈনন্দিন ভুল অভ্যাস ও খাওয়ানোর পদ্ধতি দায়ী। সময়মতো সচেতন না হলে এটি শিশুর অস্বস্তি, কান্না এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
শিশুর পেটে গ্যাসের সম্ভাব্য কারণ:
১.শুয়ে খাওয়ানো– মায়েরা অনেক সময় শিশুদের শুয়ে শুয়ে দুধ পান করানোর অভ্যাস করেন। এতে করে বাচ্চার পেটে বাতাস ঢুকে গ্যাস জমে, হজমশক্তি কমে যায় এবং পেট ফাঁপা দেখা দেয়।
২.অতিরিক্ত ফ্রিকোয়েন্ট ফিডিং– অতিরিক্ত ঘনঘন বুকের দুধ, ফর্মুলা মিল্ক বা অল্টারনেটিভ উইনিং ফুড দেওয়ার ফলে শিশুর হজমে সমস্যা হয় এবং গ্যাসের প্রবণতা বাড়ে।
৩. ভারী ও জটিল খাবার কম্বিনেশন – অনেকে খিচুড়িতে অতিরিক্ত সবজি, বিভিন্ন ধরনের ডাল, চাল ইত্যাদি মিশিয়ে জটিল মেনু তৈরি করেন। এমন জটিল খাবার শিশুর অপরিপক্ব হজম ব্যবস্থার জন্য ভারী হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলে পেটে গ্যাস তৈরি হয়।
৪. খাওয়ার পরপরই শোয়ানো – খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শিশুদের শোয়ানো একটি ভুল অভ্যাস। এতে খাবার সঠিকভাবে হজম না হয়ে গ্যাস তৈরি হয়। খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর শোয়ানো উচিত।
৫. অপরিষ্কার হাত বা খেলনা মুখে দেওয়া – শিশুরা হাতের কাছে যা পায় তাই মুখে নিয়ে ফেলে যার কারণে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রম থেকেও গ্যাস হতে পারে ।
লক্ষণ:
- পেট ফাঁপা বা টানটান হয়ে যাওয়া
- বারবার কেঁদে ওঠা (বিশেষ করে খাওয়ার পরে)
- ঘন ঘন ঢেকুর তোলা বা গ্যাস ছেড়ে দেওয়া
- ঘুমে ব্যাঘাত
- মলত্যাগে অসুবিধা
করণীয়
সঠিক খাওয়ানোর পদ্ধতি: শিশুদের কোলে বসিয়ে বা সোজা করে ধরে খাওয়ান । খাওয়ানোর পর শিশুকে কাঁধে তুলে হালকা চাপ দিয়ে ঢেঁকুর বের করে দিন।
শোয়ানোর সময় খেয়াল:খাওয়ার ৩০–৬০ মিনিট পর শিশুকে শোয়ান। খাবারের পরপরই শুয়ে পড়লে গ্যাসের ঝুঁকি বাড়ে।
হালকা মালিশ ও গ্যাস নির্গমন: “বাইসাইকেল মুভমেন্ট” করে শিশুর পা হালকা ভাবে নাড়াচাড়া করান। হালকা গরম তোয়ালে দিয়ে পেট সেঁক দিন (খুব গরম নয়)।
হালকা ও সহজপাচ্য খাবার: কম উপাদানে রান্না করা সহজপাচ্য খিচুড়ি, এক ধরনের ডাল বা সবজি আলাদাভাবে দিন।অতিরিক্ত ফাইবার বা গ্যাস তৈরি করে এমন খাবার যেমন বাঁধাকপি, ডিম, মটরশুঁটি এড়িয়ে চলুন।
পরিচ্ছন্নতা: শিশুর হাত, খেলনা, খাওয়ার সামগ্রী সবসময় পরিষ্কার রাখুন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
- শিশুর পেট অস্বাভাবিক রকমের শক্ত
- ঘন ঘন বমি
- জ্বর
- বারবার কান্না করে এবং স্বাভাবিক খাওয়া বন্ধ করে দেয়
- মলের সঙ্গে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়
শিশুর পেটে গ্যাস হওয়া একটি অতি সাধারণ সমস্যা হলেও সচেতন আচরণ ও পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শে তা সহজেই প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শিশুর খাবার যত সহজ ও হালকা হবে, তত ভালোভাবে সে হজম করতে পারবে।
সা/ই