
ছবি: সংগৃহীত
নবজাতক ও ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা না হওয়ার সমস্যা বেশ সাধারণ। অনেক সময় নতুন বাবা-মায়েরা এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক, বাচ্চার পায়খানা না হলে কী করা উচিত।
প্রথমেই জানুন স্বাভাবিকতা:
বাচ্চাদের পায়খানার ধরণ এবং কতদিন পর পর হবে, তা বয়সের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।
- নবজাতক (০-১ মাস): বুকের দুধ খাওয়া শিশুরা দিনে কয়েকবার এমনকি প্রতিবার খাওয়ানোর পরেও পায়খানা করতে পারে। আবার কয়েকদিন পর্যন্ত পায়খানা না করলেও তা স্বাভাবিক হতে পারে, যদি বাচ্চা অস্বস্তি বোধ না করে এবং পেট ফাঁপা না থাকে। ফর্মুলা দুধ খাওয়া শিশুরা তুলনামূলকভাবে কম ঘন ঘন পায়খানা করে।
- কিশোর বয়সী শিশু (১ মাস - ১ বছর): এই বয়সে শিশুরা দিনে একবার বা দু'বার পায়খানা করতে পারে। তবে দু-একদিন পরপর হলেও তা স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয় যদি পায়খানা নরম থাকে।
- বড় শিশু (১ বছর +): বড় শিশুরা সাধারণত প্রতিদিন একবার পায়খানা করে। তবে একদিন বা দু'দিন না হলেও চিন্তার কিছু নেই, যদি বাচ্চা স্বাভাবিক থাকে।
কখন বুঝবেন কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে?
যদি আপনার বাচ্চার নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে তার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে:
- দীর্ঘদিন ধরে পায়খানা না হওয়া (বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি)।
- শক্ত এবং শুকনো পায়খানা হওয়া।
- পায়খানা করার সময় খুব বেশি কষ্ট হওয়া বা কান্না করা।
- পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা।
- পেট শক্ত হয়ে থাকা।
- পায়খানার রাস্তায় ফেটে রক্ত আসা (কখনও কখনও)।
বাচ্চার পায়খানা না হলে যা করতে পারেন:
যদি আপনার বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ দেখা যায়, তবে প্রথমে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি চেষ্টা করতে পারেন:
- তরল খাবার বেশি দিন: বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার দিন। বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধের পাশাপাশি, ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য জল, ফলের রস (যেমন আপেল বা নাশপাতির রস), পাতলা স্যুপ ইত্যাদি দিতে পারেন।
- পেটে হালকা মালিশ: হালকা গরম তেল বা লোশন দিয়ে বাচ্চার পেটে ঘড়ির কাঁটার দিকে গোলাকারভাবে ধীরে ধীরে মালিশ করুন। এটি অন্ত্রের মুভমেন্টকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে।
- পা নাড়ানো ব্যায়াম: বাচ্চাকে চিৎ করে শুইয়ে তার পা দুটি ধরে সাইকেলের প্যাডেলের মতো করে ধীরে ধীরে নাড়ান। এটি পায়খানা নরম করতে সহায়ক হতে পারে।
- কুসুম গরম পানিতে গোসল: বাচ্চাকে কুসুম গরম পানিতে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখুন। এটি তার শরীরের পেশীগুলোকে শিথিল করবে এবং পায়খানা করতে সাহায্য করতে পারে।
- খাবার পরিবর্তন (ছয় মাসের বেশি বয়সী): যদি আপনার বাচ্চা ছয় মাসের বেশি বয়সী হয় এবং কঠিন খাবার খাওয়া শুরু করে, তবে তার খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন। যেমন - পাকা কলা, পেঁপে, আলু বোখারা, সবুজ শাকসবজি, ওটস ইত্যাদি।
- প্রুন জুস (ছয় মাসের বেশি বয়সী): অল্প পরিমাণে প্রুন জুস (আলু বোখারার রস) কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য খুবই কার্যকর। তবে প্রথমে অল্প পরিমাণে দিন এবং দেখুন বাচ্চা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
- গ্লিসারিন সাপোজিটরি (Glycerin Suppository): যদি ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো কাজ না করে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ছোট বাচ্চাদের জন্য গ্লিসারিন সাপোজিটরি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি পায়খানার রাস্তায় পিচ্ছিলতা এনে পায়খানা বের করতে সাহায্য করে। তবে এটি নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত নয়।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
- বাচ্চার দীর্ঘদিন ধরে পায়খানা না হওয়া এবং সে খুব অস্বস্তি বোধ করছে।
- পেটে তীব্র ব্যথা বা ফোলাভাব।
- বমি হওয়া।
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া।
- ওজন কমে যাওয়া।
- খাবার গ্রহণে অনীহা।
- যদি ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো কয়েকদিনেও কোনো কাজ না করে।
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয় করা এবং সঠিক চিকিৎসা দেওয়া জরুরি। ডাক্তার প্রয়োজন অনুযায়ী পরীক্ষা করতে এবং ঔষধ বা অন্যান্য চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন।
নবজাতক ও ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হওয়ার সমস্যা নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা না করে, প্রথমে স্বাভাবিকতা জানুন এবং ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করুন। তবে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে উন্নতি না হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আপনার সচেতনতাই আপনার সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ ডাক্তার তানিয়া ইসলামের ফেইসবুক পোষ্ট
সাব্বির