
ছবি: এমডি সাব্বির
একটি মানব শিশু ধীরে ধীরে জীবনের পথে বেড়ে ওঠে, প্রতিটি স্তরে অর্জন করে নতুন দক্ষতা। মায়ের গর্ভ থেকে শুরু হওয়া এই অবিরাম যাত্রায় প্রতিটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ, একটি বাদ দিয়ে অন্যটিতে পৌঁছানো যায় না। শারীরিক সক্ষমতা থেকে শুরু করে ভাষা ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ, সবকিছুই নির্দিষ্ট পর্যায়ক্রমে বিকশিত হয়। যদিও প্রতিটি শিশুর বিকাশের গতি ভিন্ন হতে পারে, কিছু লক্ষণ দেখলে বোঝা যায় স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হচ্ছে।
পাঁচ বছরের কম বয়সী কোনো শিশু যখন তার বয়সের তুলনায় শারীরিক, মানসিক, সামাজিক অথবা ভাষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে, তখন তাকে 'বিলম্বিত বিকাশ' বলা হয়। একাধিক ক্ষেত্রে এই ধরনের বিলম্ব দেখা গেলে তা 'গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টাল ডিলে' নামে পরিচিত।
এই বিলম্বের পেছনে জন্মপূর্ব, জন্মকালীন অথবা জন্ম-পরবর্তী বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। ডাউন সিনড্রোমের মতো বংশগত রোগ, হরমোনের সমস্যা, মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটি, জন্মের সময় আঘাত, সময়ের আগে জন্ম, সংক্রমণ, খিঁচুনি, জন্ডিস, মাথায় আঘাত অথবা বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা এর অন্যতম কারণ। এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় মায়ের জটিলতা অথবা প্রসবকালীন সমস্যাও শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে।
সাধারণভাবে, শিশুরা তিন মাস বয়সে মাথা তুলতে, ছয় মাসে বসতে এবং ১৮ মাসে হাঁটতে শেখে। ভাষার ক্ষেত্রে, ছয় মাসে আধো-আধো বুলি, ৮-১২ মাসে ছোট অর্থপূর্ণ শব্দ এবং দুই বছর নাগাদ দুটি শব্দ জুড়ে কথা বলতে শুরু করে। এই মাইলফলকগুলোতে পৌঁছাতে দেরি হলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
অন্যান্য কিছু লক্ষণও বিকাশের বিলম্বের ইঙ্গিত দেয়। যেমন: মায়ের দিকে না তাকানো, চোখের সামনে খেলনা ধরলে ধরতে না পারা, ডাকলে সাড়া না দেওয়া, জামাকাপড় পরতে বা নিজে খেতে না শেখা।
শিশুর বিকাশে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে ওষুধ, বিভিন্ন থেরাপি এবং পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুকে স্বাভাবিক বিকাশের পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
মনে রাখবেন, প্রতিটি শিশুর বৃদ্ধি একটি পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়া। তাই তাদের বয়স অনুযায়ী কাজকর্মের দিকে নিয়মিত খেয়াল রাখা প্রত্যেক মা-বাবার দায়িত্ব। কোনো আচরণ অস্বাভাবিক মনে হলে অথবা বিকাশের কোনো স্তর অনুপস্থিত দেখলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। আপনার সচেতনতাই পারে আপনার সন্তানের স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে।
সূত্রঃ শিশু বিশেষজ্ঞ, বারডেম জেনারেল হসপিটাল।
সাব্বির