
ছবিঃ সংগৃহীত
শুধু গেঁটেব্যথার জন্যই নয়, ইউরিক অ্যাসিডের ক্ষতিকর দিক এখানেই শেষ হয় না। ধীরে ধীরে উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড কিডনির ওপরও প্রভাব ফেলে-যা শুরুতে বোঝা যায় না। তাই শরীরের ভেতরে কী ঘটে চলেছে এবং কোন প্রাকৃতিক অভ্যাসগুলি ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক, তা জানা জরুরি।
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড ও কিডনির সম্পর্ক
অনেকে মনে করেন, ইউরিক অ্যাসিড ক্ষতিকর কেবল তখনই যখন তা জয়েন্টে ব্যথা তৈরি করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, গেঁটেব্যথার উপসর্গ না থাকলেও উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড দীর্ঘমেয়াদে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। রক্তে ইউরিক অ্যাসিড জমে ক্ষুদ্র স্ফটিক তৈরি করে যা শুধু জয়েন্ট নয়, কিডনিতেও জমতে পারে। এতে ইনফ্ল্যামেশন, কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস এবং কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ে। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো—এই ক্ষতি নীরবে ঘটে যায়, অনেক সময় বোঝাই যায় না।
লুকানো লবণ হতে পারে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণ
অনেকে ভাবেন শুধু চিনি ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়। কিন্তু লবণও ভূমিকা রাখে, বিশেষত প্রসেসড বা প্যাকেটজাত খাবারে থাকা "লুকানো সোডিয়াম"। এটি রক্তচাপ ও কিডনির পরিশোধন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে, ফলে ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে সমস্যা হয়।
উপায় হিসেবে রান্নায় নিয়মিত পাথরের লবণ বা হিমালয়ান পিংক সল্ট ব্যবহার করতে পারেন এবং সস, ইনস্ট্যান্ট খাবার ও স্ন্যাকস কম খেতে হবে।
চেরির আশ্চর্য ক্ষমতা
ডায়েটে সাধারণত যকৃত বা লাল মাংসের মতো উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু টার্ট চেরির উপকারিতা অনেকেই জানেন না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, চেরি গ্রহণ গেঁটেব্যথার ঝুঁকি ৩৫% পর্যন্ত কমায়।
টার্ট চেরিতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক যৌগ ইনফ্ল্যামেশন কমায় ও ইউরিক অ্যাসিড হ্রাসে সহায়তা করে। সপ্তাহে কয়েকবার এক বাটি তাজা চেরি অথবা চিনি ছাড়া চেরি জুস উপকারী হতে পারে।
লেবু পানি শুধুই ডিটক্স নয়
শুধু পানি পান করলেই ইউরিক অ্যাসিড দূর হবে—এই ধারণা ভুল। লেবুতে থাকা সাইট্রেট ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিক গঠনে বাধা দেয় এবং কিডনি সুরক্ষায় সহায়ক।
সকালে খালি পেটে গরম লেবু পানি পান শরীরকে হালকা ক্ষারীয় করে তোলে, কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে সহায়তা করে।
হালকা ব্যায়ামে কিডনি সুরক্ষা
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে অনেকে মনে করেন কঠিন ব্যায়াম দরকার। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যায়াম, হাইড্রেশন ছাড়া করলে, উল্টো ক্ষতি হতে পারে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, হালকা যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং কিডনির জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর।
এই ধরনের নরমাল এক্সারসাইজ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, কিডনির ফিল্টারেশন উন্নত করে এবং ইনফ্ল্যামেশন কমায়।
আয়ুর্বেদিক সহায়তা
গিলয় (Tinospora cordifolia) ও পুনর্ণবা (Boerhavia diffusa) দুইটি শক্তিশালী আয়ুর্বেদিক ভেষজ যা ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ ও কিডনি স্বাস্থ্য রক্ষায় বহু প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এগুলো প্রাকৃতিক ডিউরেটিক ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে। তবে, এগুলো ব্যবহার করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনিকে ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে রক্ষা করবেন যেভাবে
প্রতিদিনের জীবনে কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান থেকে সাবধান থাকতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন যেন কিডনি সহজেই টক্সিন দূর করতে পারে। ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ, বিশেষ করে NSAID জাতীয় ব্যথানাশক সঠিক মাত্রায় ও প্রয়োজন ছাড়া গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি, ভারী ধাতু বা শিল্প রাসায়নিকের সঙ্গে যারা কাজ করেন, তারা যেন প্রয়োজনীয় সুরক্ষা মানেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে কিছু সহজ অভ্যাস অনুসরণ করেই কিডনির সুরক্ষা ও ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এখন থেকেই শুরু করুন—কারণ কিডনি সচেতনতা মানেই সুস্থ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলা।
মুমু