
ফলমূলকে সাধারণত পুষ্টির আধার হিসেবে ধরা হয়। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, বিপাকক্রিয়া সচল রাখা, হজমশক্তি বাড়ানো এবং হৃদযন্ত্র ভালো রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে জনপ্রিয় দুটি ফল – আম ও অ্যাভোকাডো – প্রায় একই পরিমাণ ক্যালোরি যুক্ত হলেও পুষ্টির দিক থেকে একে অপরের চেয়ে আলাদা। তাহলে প্রশ্ন হলো, কোনটি বেশি উপকারী?
পুষ্টিগুণ: আম বনাম অ্যাভোকাডো
এক কাপ পাকা আমে থাকে প্রায় ১৬৫ ক্যালোরি, ২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২৩ গ্রাম চিনি, ৩ গ্রাম ফাইবার, ১.৪ গ্রাম প্রোটিন এবং মাত্র ০.৬ গ্রাম চর্বি।
অন্যদিকে, একটি মাঝারি আকৃতির অ্যাভোকাডোতে থাকে প্রায় ১৫০ ক্যালোরি, ২২ গ্রাম স্বাস্থ্যকর চর্বি, ১২.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১০ গ্রাম ফাইবার, মাত্র ০.২ গ্রাম চিনি এবং ৩ গ্রাম প্রোটিন।
কোনটিতে কী বেশি?
অ্যাভোকাডোর প্রধান বিশেষত্ব হলো এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, বিশেষ করে ওলিক অ্যাসিড, যা হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। এছাড়াও এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার, যা হজমে সহায়ক এবং দীর্ঘক্ষণ তৃপ্তি দেয়। অ্যাভোকাডোতে রয়েছে ভিটামিন কে, ই, সি, বি৫, বি৬ ও ফলেট। চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এতে আছে লুটেইন ও জিয়াজানথিন। আর চিনি প্রায় নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে, আমে থাকে উচ্চমাত্রায় ফ্রুক্টোজ, যা দ্রুত শক্তি দেয়। এটি ভিটামিন সি, এ, ই, কে ও বি গ্রুপের ভিটামিনে সমৃদ্ধ। ত্বক, রোগ প্রতিরোধ ও চোখের যত্নে সহায়ক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন বিটা-ক্যারোটিন ও ম্যাঙ্গিফেরিনও এতে রয়েছে।
গবেষণায় কী বলছে?
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক গবেষণা অনুযায়ী, আমে রয়েছে অ্যান্টিডায়াবেটিক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ভাইরাল, হৃদরোগ প্রতিরোধী ও প্রদাহনাশক উপাদান। এছাড়াও এটি পাচনতন্ত্র সুরক্ষা, রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি, লিভার রক্ষা, এমনকি টিউমার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে। আমে থাকা ফাইবার ও অ্যামাইলেজ এনজাইম হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
অন্যদিকে, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত দুবার অ্যাভোকাডো খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৬% এবং করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি ২১% কমে। পাশাপাশি, মাখন বা প্রক্রিয়াজাত মাংসের পরিবর্তে অর্ধেক পরিমাণ অ্যাভোকাডো খাওয়াও দেহের জন্য উপকারী।
কোনটি বেশি পুষ্টিকর?
সবদিক বিবেচনায় অ্যাভোকাডো একটি ‘নিউট্রিয়েন্ট-ডেন্স’ ফল, অর্থাৎ এতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফাইবার রয়েছে – এবং চিনি প্রায় নেই বললেই চলে। তবে আমও কম যায় না। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও ত্বক-চোখ ভালো রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে গরমকালে সীমিত পরিমাণে আম খেলে তা দ্রুত শক্তি জোগায়।
পুষ্টির দিক থেকে অ্যাভোকাডো একটু এগিয়ে, তবে স্বাদ, ঋতু, এবং চাহিদা অনুযায়ী উভয় ফলই যথাযথ পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরের উপকারেই আসে।
এসএফ