ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

বলাৎকারের পর শিশু ছোটনকে হত্যা, আদালতে হত্যাকারীর স্বীকারোক্তি

বেলাল হোসেন রিয়াজ, সংবাদদাতা ,নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা)

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ৩ মে ২০২৫

বলাৎকারের পর শিশু ছোটনকে হত্যা, আদালতে হত্যাকারীর স্বীকারোক্তি

নাঙ্গলকোটে নিখোঁজের একদিন পর শাখাওয়াত হোসেন ছোটন (৭) নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। ছোটনকে ডেকে নেওয়া সাইফুল (১৬) বলাৎকারের পর তাকে গলা টিপে হত্যা করে লাশ একটি মৎস্য প্রজেক্টের পুকুরে ফেলে দেয়। শুক্রবার (২ মে) কুমিল্লার শিশু আদালতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সাইফুল এ স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।

হত্যাকারী সাইফুল নিজেই বৃহস্পতিবার (১ মে) সকালে ছোটনের পিতা আনোয়ার হোসেন হানিফের নিকট একটি মৎস্য প্রজেক্টে ছোটনের লাশ ভেসে থাকার কথা জানায়। এর একদিন আগে, বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুর থেকে শাখাওয়াত হোসেন ছোটন নিখোঁজ ছিল। ছোটন উপজেলার পেড়িয়া ইউনিয়নের কাজীজোড়পুকুরিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন হানিফের ছেলে। হত্যাকারী সাইফুলও একই ইউনিয়নের এবং একই গ্রামের মাহবুবুল হকের ছেলে।

ছোটনের পিতা বাদী হয়ে সাইফুলকে আসামি করে নাঙ্গলকোট থানায় শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণ-হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বৃহস্পতিবার (১ মে) সকালে ছোটনের লাশ উদ্ধারের পর সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুভ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ছোটনের চাচা মীর হোসেন জানান, বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুর থেকে ছোটনকে খুঁজে না পেয়ে তার খেলাধুলার সাথীদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, ওইদিন দুপুর তিনটার দিকে একই গ্রামের মাহবুবুল হকের ছেলে সাইফুল (১৬) ছোটনকে শ্রীফলিয়া বাজারের দিকে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সাইফুলকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, ছোটন একই গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির মাদ্রাসা পর্যন্ত যাওয়ার পর তার সঙ্গে আর যায়নি। পরে ওইদিন বিকেল ৫টার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পাওয়ায় রাত ৮টার পর ছোটনের খোঁজে এলাকায় মাইকিং করা হয়।

রাতে নিখোঁজ ছোটনের বাড়িতে গ্রামবাসীসহ সাইফুলের পরিবারের অন্যান্য লোকজন আসলেও সাইফুল আসেনি। এরপর থেকেই ছোটন হত্যার ঘটনায় সবার সন্দেহের তীর সাইফুলের দিকে যায়। বৃহস্পতিবার (১ মে) সকালে সাইফুল জানায়, ছোটনের লাশ কাজীজোড়পুকুরিয়া গ্রামের মাওলানা সাইফুল ইসলামের মৎস্য প্রজেক্টের পুকুরে ভাসতে দেখেছে। পরে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ছোটনের লাশ শনাক্ত করেন। এক পর্যায়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

মীর হোসেন আরও জানান, আমার ভাতিজা ছোটনের শরীরের পশ্চাদ্দেশে লাল আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার পরনের প্যান্ট অর্ধেক খোলা ছিল এবং শরীরে কোনো কাপড় ছিল না। যে মৎস্য প্রজেক্টের পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে মাত্র ৩ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। ৩ ফুট পানির গভীরতায় সে কীভাবে মারা যায়?

নাঙ্গলকোট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুভ জানান, শিশু শাখাওয়াত হোসেন ছোটন হত্যার ঘটনায় তার পিতা আনোয়ার হোসেন হানিফ সাইফুলকে আসামি করে থানায় শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণ-হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় সাইফুলকে আটক করা হয়। শুক্রবার (২ মে) কুমিল্লা শিশু আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট সাইফুল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে শিশু ছোটনকে বলাৎকার করার পর চিৎকার করলে তাকে গলা টিপে হত্যা করে মৎস্য প্রজেক্টে ফেলে রাখার কথা স্বীকার করেছে। আসামি সাইফুলকে আদালতের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।

আফরোজা

×