ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

ঘুমের ওষুধ নাকি নীরব ঘাতক!

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ১৬ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৮:৩৬, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

ঘুমের ওষুধ নাকি নীরব ঘাতক!

ছবি: প্রতীকী

 

আপনার কি রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে হয়? ঘুমের ওষুধ ছাড়া ঘুম আসে না?

তাহলে এই নিবন্ধটি আপনার জন্য। জেনে নিন নিজের অজান্তেই আপনি নিজের শারীরিক ক্ষতি করছেন কি না।  

বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন। রাতের বেলা শান্তির ঘুম কে না চায়! যে কারণে বহু মানুষ রাতে ঘুমের ওষুধ খান। ঘুমের ওষুধ আপনার শরীরে একটি ঝিম ভাব এনে দেয় এবং শিথিল করে দেয়।  

প্রচলিত কিছু ঘুমের ওষুধ

  • মেলাটোনিন

  • সেডিল

  • এটিভান

  • সেরাক্স

  • ট্রিপটিন

  • রিভোট্রিল

  • মাইলাম

  • এমিলিন

  • এম্বিয়ান

  • যালেপ্লন (সোনাটা)

 

ঘুমের ওষুধ যেভাবে কাজ করে

একেকটি ঘুমের ওষুধ একেকভাবে কাজ করে। কিছু ওষুধ ঝিম ভাব এনে। কিছু ওষুধ মস্তিষ্কের সক্রিয় অংশগুলোকে নীরব করে দেয়। 

বেশিরভাগ ওটিসিতে (যে ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন পড়ে না) এন্টিহিস্টামিন থাকে। এগুলো সাধারণত ঠান্ডা, অ্যালার্জির ওষুধ হিসাবে ব্যবহত হয়। এন্টিহিস্টামিন আমাদের শরীরের হিস্টামিনগুলোকে বন্ধ করে দেয়। হিস্টামিন এমন একটা বস্তু যা আমাদের শরীরকে সতর্ক করে তোলে। এই ওষুধগুলো একটু ঝিম ভাব আনে যা ঘুম আনতে সাহায্য করে। এমন কিছু ওষুধ হল মাইলাম, হিস্টাসিন।

মেলাটনিন একটি হরমোন যা আমাদের ঘুমের সময়কে প্রভাবিত করে। ঘুমানোর সময় ঠিক করার জন্য এটি ওষুধ আকারেও কিনতে পাওয়া যায়। 

প্রেসক্রিপশন ওষুধগুলো আবার ভিন্নভাবে কাজ করে। যেমন, বেঞ্জোডায়াজিপিন (সেডিল, এটিভান, সেরাক্স, রিভোট্রিল) মস্তিষ্কে গাবা নামের একটি কেমিক্যাল তৈরি করে যা শরীরের চেতনাশক্তি হ্রাস করে, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কমায় এবং মাংসপেশীকে নমনীয় করে দেয়। জেড ড্রাগ (এম্বিয়ান যালেপ্লন (সোনাটা))মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীর গতির করে দেয়। 

 

ঘুমের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যেগুলো আপনাকে ধীরে ধীরে নিস্তেজ করে দিতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে বিশেষজ্ঞরা তাদের অনুমতি ব্যতীত ঘুমের ওষুধ খাওয়াকে অনুৎসাহিত করে। 

আনুমানিক ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরদিন ঝিম ভাব থেকে যায় ও মাথা ঘুরায়। কাজের মধ্যে ভারসাম্য থাকে না।

 

ওটিসি ঘুমের ওষুধগুলোর যে ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে___

  • কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া

  • মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া 

  • মাথা ব্যথা

  • মাংসপেশীর দুর্বলতা

  • হজমের সমস্যা; গ্যস্ট্রিক, বুক জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাব

  • নাক ডাকার সমস্যা বৃদ্ধি 

 

দীর্ঘদিন ঘুমের ওষুধ খাওয়া ব্যক্তিদের স্বাভাবিক ঘুম নাও আসতে পারে কারণ এটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ওষুধ না খেলে ঘুম আসে না। কিছু কিছু প্রেসক্রাইবড বা অনুমোদিত ওষুধ যেমন জেড ড্রাগ প্যারাসমনিয়া বা নিদ্রাজনিত সমস্যার সৃষ্টি করে। জেড ড্রাগ যারা সেবন করে তারা ঘুমের মধ্যে খাবার খাওয়া, গাড়ি চালানো সবকিছুই করতে পারে কিন্তু তারা পরবর্তীতে কিছু মনে রাখতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে মনে হতে পারে মানুষটি জেগে আছে কিন্তু তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি কাজ করে না। 

 

দীর্ঘদিন ঘুমের ওষুধ ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া____

  • ঘুমের ওষুধ দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবহার করলে মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করতে পারে

  • স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়।

  • লিভারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে 

  • কিডনি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে 

ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পর যদি বমি এবং মাথা ঘোরানো ভাব আসে তাহলে সতর্ক হন। আপনি যদি আগে থেকে হৃদরোগ, কিডনি, বা লিভারের মতো সমস্যায় ভোগেন তাহলে ঘুমের ওষুধ এড়িয়ে চলুন।  

ঘুমের ওষুধ আসক্তি তৈরি করে কি না

বেঞ্জোডায়াজিপিন ওষুধগুলো আসক্তি তৈরি করতে পারে। এজন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন বাদ দিতে হবে। 


 

তথ্যসূত্র

বিদেশি মিডিয়া সংস্থা

 

সুরাইয়া

×