ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসা

অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ ও চিকিৎসা

ডা. জাহেদ পারভেজ

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ  ও চিকিৎসা

.

মাঙ্কিপক্স নিয়ে অনেকের মধ্যেই ভালো ধারণা নেই। অনেকেই মাঙ্কিপক্সকে চিকেন পক্স ভেবে ভুল করছেন। অথচ দুটোই আলাদা সংক্রামণ রোগ।  ইতোমধ্যে মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলাদা সতর্কতা জারি হয়েছে। অনেক দেশে আক্রান্ত মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে।

মাঙ্কিপক্স মূলত বিশেষ এক ধরনের বসন্ত রোগ। প্রাণীদেহের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে, ইঁদুরের মাধ্যমে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। শ্বাসনালি, শরীরে তৈরি হওয়া কোনো ক্ষত, নাক কিংবা চোখের মাধ্যমেও অন্যের শরীরের প্রবেশ করে এই ভাইরাস। এমনকি আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থেকেও মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

রোগ নির্ণয় : রক্ত এবং লালারসের নমুনা পরীক্ষা করলেই শরীরে মাঙ্কিপক্সের  ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব।

কিভাবে বুঝবেন আক্রান্ত

আক্রান্তরা অনেকেই শুরুতে সাধারণ জ্বর ভেবে ভুল করেন। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, পেশিতে ব্যথা, গায়ে হাত পায়ে ব্যথার মতো প্রাথমিক উপসর্গ  দেখা দেয়। ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে। শরীরে ছোট ছোট অসংখ্যা ক্ষতচিহ্নের দেখা যায়। ক্রমশ সেই ক্ষত আরও গভীর হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গুটি বা জল বসন্তের সঙ্গে মাঙ্কি পক্সের লক্ষণ একই রকম হওয়ার কারণে অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগকে বসন্ত বা চিকেন পক্স  ভেবে ভুল করেন। আমাদের দেহের গলা মাথার পেছন, কুচকি বগলে এই লসিকা গ্রন্থি থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অংশ হিসেবে এই গ্রন্থি রোগ প্রতিরোধের কোষ জমা রাখে। ভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে এই গ্রন্থিগুলো ফোলা শুরু করে।

মাঙ্কিপক্স থেকে চিকেন পক্স আলাদা

কারো চিকেন পক্স হলে শরীরে লালচে রঙের ঘামাচি বা ্যাশের মতো গুটি বের হয়। শরীরে ব্যথা, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর ইত্যাদি লক্ষণে চিকেন পক্সের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের মিল আছে। চিকেন পক্সের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার থেকে দিনের মধ্যে শরীরে ফুসকুঁড়ির সৃষ্টি করে। সেটা ধীরে ধীরে পানিভরা ফোস্কার আকার নেয়। পরে ফোস্কার ভিতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়। থেকে ১০ দিন পর থেকে তা আস্তে আস্তে শুকোতে থাকে।

মাঙ্কিপক্সে থেকে ২১ দিনের মধ্যে আক্রান্তর লক্ষণ প্রকাশ হতে থাকে। জ্বরের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রী পর্যন্ত হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ফুসকুড়ি গুলো মুখে শুরু হয়, তারপর শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে পুরোপুরি সুস্থ হতে  থেকে সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আক্রান্তরা অনেক বেশি দুর্বল হয়ে যায়।

তরলযুক্ত এই ফুসকুড়িগুলো পরে ত্বকের দাগেরও সৃষ্টি করছে। চিকেন পক্স মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো, মাঙ্কিপক্সের কারণে লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যায় (লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি) আর চিকেন পক্সে এই লক্ষণ থাকে না। লিম্ফনোড হলো একটি ডিম্বাশয় বা কিডনি আকৃতির অঙ্গ। এটি লসিকাতন্ত্রের অভিযোজিত রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার একটি অঙ্গ। লিম্ফনোডগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃতভাবে উপস্থিত থাকে। মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস শরীরে ঢুকলে লিম্ফনোডগুলো ফুলে ওঠে।

চিকিৎসা

চিকেন পক্সের যেভাবে টিকা প্রতিশোধক আবিষ্কৃত হয়েছে মাঙ্কিপঙ্কে এখন পর্যন্ত সেরকম সরাসরি কোনো ওষুধ নেই। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কিছু অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ আছে যা ব্যবহারে মাঙ্কিপক্সের প্রকোপ কিছুটা দূর হয়। এই সব ওষুধে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। ক্ষেত্রে রোগীদের ওপর দুটি ভিন্ন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ  ব্রিনসিডোফোভির এবং টেকোভিরিমাট দেওয়া হয়। তবে গবেষকদের দাবি টেকোভিরিমাট পুরোপুরি কার্যকর ফল পাওয়া গেলেও ব্রিনসিডোফোভির কার্যকারিতা এখন সেভাবে সফল হয়েছে বলা যাবে না।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন অ্যালার্জি রোগ বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

চেম্বার : ডা. জাহেদ হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক সেন্টার, সাবামুন টাওয়ার (ষষ্ঠতলা), পান্থপথ মোড়, ঢাকা। ০১৫৬৭-৮৪৫৪১৯, ০১৭৩০-৭১৬০৬০

×