ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্নায়ুর জটিল অসুখ মাল্টিপল সেক্লরোসিস

ডা. এম. এস. জহিরুল হক চৌধুরী

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ৩০ মে ২০২৩

স্নায়ুর জটিল অসুখ মাল্টিপল সেক্লরোসিস

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসকে বলা হয় অটোইমিউন ডিজিজ

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসকে বলা হয় অটোইমিউন ডিজিজ।  শরীর দুর্বল লাগা, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা, পেশিতে অসহ্য ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা-মাইগ্রেন, খাদ্যনালী-মূত্রনালীতে সংক্রমণ, সেই সঙ্গে অসাড় হয়ে যায় হাত-পা। কোন কিছু চিন্তা করতে পারছেন না। শরীরের রোগ বাসা বাঁধার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়।  অবসাদ, বিষণœতা, একাকীত্বে ভোগেন রোগী।  ডাক্তারি ভাষায় বলে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis) বা এমএস।
কেন হয় 
এ রোগের সুস্পষ্ট কারণ জানা যায়নি। মহিলাদের মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষদের থেকে কয়েকগুণ বেশি। ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যেই এই স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। পরিবেশ, জিন ও বংশগত কারণে এই রোগ হতে পারে।
লক্ষণ
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগে পেশির ওপরে চাপ পড়ে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসতে পারে। পেশির দুর্বলতা এ রোগের প্রধান লক্ষণ। পেশিতে ব্যথা হয়। হাত-পা নাড়ানো যায় না। পেশিতে টান, খিঁচুনি সবই দেখা দেয়। একটা সময় অসাড় হতে থাকে হাত-পা। কোনো স্পর্শের অনুভূতি থাকে না।
শরীরের ভারসাম্য থাকে না। হাঁটাচলা করা, খাবার খাওয়া, খাবার গেলা, কথা বলায় সমস্যা হয় অনেকের। খাদ্যনালী, অন্ত্র, মূত্রনালী আক্রান্ত হয়। শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে অবসাদ, উৎকণ্ঠা, একাকীত্বে ভোগেন। হতাশা গ্রাস করে। কম বয়সীদের বুদ্ধির বিকাশ বাধা পায়। রোগীর মধ্যে অস্থির ভাব প্রকাশ পায়। স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তায় সমস্যা হয়। কারও কারও শ্রবণশক্তিও চলে যায়। মাঝে মাঝেই শরীরে কাঁপুনি দেখা দেয়। তবে সব লক্ষণই সবার মধ্যে প্রকাশ পায় না।
কী থেকে হয় 
স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয় নিউরন বা স্নায়ুকোষ দিয়ে। মানুষের মাথায় হাজার কোটির বেশি স্নায়ুকোষ বা নার্ভ সেল থাকে। এই স্নায়ুকোষ বা নিউরনগুলো পরস্পরের সঙ্গে যে সুতো দিয়ে বাঁধা থাকে তাকে বলে স্নায়ুতন্তু। প্রতিটি স্নায়ুকোষের একটা মাথা থাকে আর লম্বা লজের মতো অংশ থাকে। মাথাকে বলে কোষদেহ, আর লম্বা অংশটা অ্যাক্সন। এই অ্যাক্সনের চারদিকে পাতলা সোয়ান কোষ  তৈরি আবরণ থাকে যা নিউরিলেমা। এই নিউরিলেমা পরিবেষ্টিত অ্যাক্সনকে বলে স্নায়ুতন্তু। নিউরিলেমা ও অ্যাক্সনের মাঝে যে ফাঁক থাকে সেখানে স্নেহপদার্থের একটা স্তর থাকে, যাকে মায়েলিন আবরণ বলে। এই মায়েলিনের কাজ হলো স্নায়ুতন্তু বা নার্ভ ফাইবারকে সুরক্ষা দেওয়া। যদি এই স্তরে ক্ষত তৈরি হয় বা স্তরটি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে স্নায়ুতন্তু মস্তিষ্ক ও শরীরের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে পারে না। অর্থাৎ সোজা কথা বলতে গেলে, মাথার সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অংশের যোগসূত্র বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। যে কারণেই নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
রোগ নির্ণয়
রোগ নির্ণয়ে এমআরআই স্ক্যান (গজও) করা হয়। অপটিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি (ঙঈঞ) টেস্টে চোখের স্নায়ুর ছবি তোলা হয়। অপটিক নার্ভের কতটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা বোঝা যায়। স্পাইনাল ট্যাপ (ষঁসনধৎ ঢ়ঁহপঃঁৎব) পরীক্ষায় ধরা যায় স্পাইনাল ফ্লুইঢের কতটা ক্ষতি হয়েছে। রোগ কতটা ছড়িয়েছে সেটাও নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী  থেরাপি দেওয়া হয়। ইভোক পোটেনশিয়াল টেস্টে (ঠঊচ) ব্রেন ড্যামেজ হয়েছে কিনা ধরা যায়। 
চিকিৎসা
শুরুতে ধরা পড়লে এই রোগ সারানো সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা, মেডিটেশনে রোগী ভালো হয়। কিছু থেরাপিও আছে যাতে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের মতো জটিল স্নায়ুর রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ফিজিক্যাল থেরাপি আছে, আকুপাংচার থেরাপিও করেন ডাক্তাররা। নানা রকম যোগা ও কাউন্সেলিং করানো হয় রোগীকে। মানসিক সমস্যা দেখা দিলে তার অনেকটা নিরাময় হয় এভাবেই। অনেক রকম ওষুধ আছে যেমন ডিজিজ-মডিফাইং ওষুধ, প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি ওষুধ। স্টেরয়েড দিয়েও চিকিৎসা করা হয়। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে কেমোথেরাপিউটিক এজেন্ট ব্যবহার হয়। ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগও আছে। এসব ছাড়াও শরীরচর্চা, পুষ্টিকর খাবার ও দিনে কিছুটা সময় মেডিটেশন করতে বলেন ডাক্তার। এর পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও কাউন্সেলিংয়ে এই জটিল স্নায়ুর রোগ দূর করা যায়।
 লেখক : অধ্যাপক 
 ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর, এক্সপানশন প্রজেক্ট, এনআইএনএস, ঢাকা। অধ্যাপক (ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি)
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা।
 চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ (দ্বিতীয় তলা)  (শ্যামলী শাখা, ঢাকা)।
০১৩০৯-৩৩৮-২১৪,
০১৭৯৪-৫৬০-০৪৪

×