
বিশ্বজুড়ে যদি হঠাৎ করেই সব খাদ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়—তাহলে কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সম্প্রতি একটি গবেষণা চালিয়েছে জার্মানির গ্যোটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কটল্যান্ডের এডিনবরার ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গ। তারা জানিয়েছে, এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে বিশ্বের মাত্র একটি দেশই পুরোপুরি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকবে।
এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে প্রভাবশালী জার্নাল Nature Food-এ। গবেষকরা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, মোট ৭টি খাদ্য বিভাগের (ডাল, বাদাম ও বীজ, শাকসবজি, ফলমূল, শর্করা জাতীয় খাবার, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাংস এবং মাছ) উপর ভিত্তি করে কোন দেশ কতটা নিজের চাহিদা নিজেই পূরণ করতে পারে।
সবকিছু মিলিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, গায়ানা (দক্ষিণ আমেরিকার একটি ছোট দেশ, জনসংখ্যা মাত্র ৮ লাখ) একমাত্র দেশ যারা সব ৭টি খাদ্য বিভাগেই নিজের দেশের জনগণকে খাবার দিতে পারবে, যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।
তালিকায় গায়ানার পরেই রয়েছে চীন এবং ভিয়েতনাম—তারা ৬টি খাদ্য বিভাগের চাহিদা পূরণ করতে পারবে নিজেদের উৎপাদন থেকে।
১৮৬টি দেশের মধ্যে ১৫৪টি দেশই সর্বোচ্চ ২ থেকে ৫টি খাদ্য বিভাগের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
সবচেয়ে বিপদে রয়েছে আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ম্যাকাও, কাতার ও ইয়েমেন—যারা একটি খাদ্য বিভাগেও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
গবেষণার প্রধান লেখক জোনাস স্টেল বলেন, “স্বাস্থ্যকর ও টেকসই খাদ্য নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক খাদ্য বাণিজ্য অপরিহার্য। কিন্তু মাত্র এক বা দুইটি দেশের উপর নির্ভরশীলতা যে কোনো মুহূর্তে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।”
গবেষণায় আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষিখাতে চরম ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, যা খাদ্য উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলবে।
উন্নত দেশগুলো যেমন অতিরিক্ত মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করে, তেমনিভাবে অনেক আফ্রিকান দেশ শাকসবজি বা বাদামজাতীয় খাবার পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারে না।
গবেষণার সহ-লেখক আলেক্সান্ডার ফন্ডারসমিডট, ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গের এক গবেষক, বলেন, “জলবায়ু ধাক্কা প্রতিদিন কৃষিক্ষেত্রে নতুন করে আঘাত হানছে। তাই উন্মুক্ত বাণিজ্য এবং উদ্ভাবনই হতে পারে স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব খাদ্য নিরাপত্তার একমাত্র পথ।”
মিমিয়া