ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে চাপের মুখে বিশ্ব নেতারা

কাওসার রহমান, দুবাই থেকে 

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে চাপের মুখে বিশ্ব নেতারা

২৮তম জলবায়ু সম্মেলন। 

জীবাশ্ম জ্বালানি তথা কার্বন নির্গমনকারী জ্বালানি তেল বন্ধের ব্যাপারে প্রচন্ড চাপের মুখে পড়েছেন বিশ্ব নেতারা। বিশেষ করে, ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট আরব আমিরাতের তেল কোম্পানির প্রধান সুলতান আল জাবের বলেছেন, ‌‌‌‌‌জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে কার্বন দূষণ বাড়ছে তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।’ তার এই বক্তব্যের পরই জলবায়ুকর্মীরা সোচ্চার হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে কার্বন দূষণের নতুন নতুন রিপোর্ট নীতি নির্ধারকদের বক্তব্যকে বিতর্কিত করে তুলছে। 

এরই মধ্যে দুবাইয়ের এক্সপো সিটিতে বুধবার ষষ্ঠ দিন আলোচনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীরা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে রেকর্ড কার্বন নির্গমনের নতুন রিপোর্ট দিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ফসিল ফুয়ের থেকে ২০২৩ সালে কার্বন নির্গমন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। কার্বন নির্গমন পরিস্থিতি উন্নতির পরিবর্তে গত দুই বছরে আরো অবনতি হয়েছে। এই নির্গমনের পরিমাণ এ বছর ৪০.৯ গিগাটনে গিয়ে পৌঁছাবে। 

বিশ্বের ১২০ জন বিজ্ঞানীর এই নতুন প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন দূষণের ফলে পৃথিবী পাঁচটি বিপর্যয়কর জলবায়ু টিপিং পয়েন্ট অতিক্রম করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। যদি পৃথিবীর গড় উষ্ণতা এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উত্তপ্ত হয় তবে ২০৩০ সালে আরো তিনটি দৃশ্যমান হবে। 

নতুন রিপোর্ট প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেটারের গ্লোবাল সিস্টেম ইনস্টিটিউট এর টিম লেন্টন বলেছেন, ‌পৃথিবী সিস্টেমের টিপিং পয়েন্টগুলো এমন একটি বিশালতার হুমকি সৃষ্টি করেছে। যার মুখোমুখি বিশ্ব মানবতা অতীতে হয়নি।  

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ক্লাব অব রোমের ৭৫ জন বিজ্ঞানী কপ নেতৃবৃন্ধের উদ্দেশ্যে এক খোলা চিঠি দিয়েছেন। তারাও কপ প্রেসিডেণ্টের বক্তব্যের বিরোধীতা করে এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। 

খোলা চিঠিতে তারা বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ এবং বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক। একটির সঙ্গে অন্যটি জড়িত। এ ব্যাপারে বিজ্ঞান নিয়ে সংশয়ের কোন সুযোগ নেই। প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু শৃন্য কার্বন নির্গমন নিশ্চিত করলেই হবে না, ওই সময় পর্যন্ত বিশ্বে যে কার্বন ডাই অক্সাইড বিদ্যমান থাকবে তা  শোষণ করার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।   

জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে এসব রিপোর্ট পরিবেশবাদীদের আরো ক্ষুব্দ করে তুলেছে। তারা দিন ভর জলবায়ু সম্মলন কেন্দ্রের ভেতরে নানা স্লোগানে তাদের প্রতিবাদ জানিয়ে জলবায়ু সম্মেলনের নীতি নির্ধারকদের সতর্ক করে দিয়েছে। তারা চাইছে, এবারের জলবায়ু সম্মেলনেই জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক। 
বাংলাদেশের পরিবেশবাদীরাও জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে কপ প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের বিরোধিতা করছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের এক পরিবেশবাদী নাগরিক সংগঠন কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালন আমিনুল হক বলেন, ‘আমরা কপ প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধী করছি। তার এই বক্তব্য বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরো বাড়বে এবং ঝুকিপূর্ণ দেশগুলোর দুর্যোগ আরো বাড়বে। আমরা তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার চাই এবং বিজ্ঞান সম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।’
 
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ৪০ শতাংশ কমাতে হবে। সেই সঙ্গে এবারের জলবায়ু সম্মলনে বৈশ্বিক যে মুল্যায়ন হচ্ছে সে আলোকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শুন্য করতে না পারলে ২১শ শতাব্দীর মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান পরিস্কার বলে দিয়েছে।’
 
আমিনুল হক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ধনী দেশগুলোর ব্যবসায়ীক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে বৈশ্বিক উষ্ণতা তথা কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি হ্রাসের কোনো উন্নতি হবে না। তবে এবারের সম্মেলন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই সংশয়ের মুল কারণ হচ্ছে, এবারের জলবাযু সম্মেলনে রেকর্ড সংখ্যক তেল গ্যাসের পক্ষের লবিষ্টদের আগমন। এ বছর জলবায়ু সম্মেলনে দুই হাজার ৪৫৬ জন তেল গ্যাসের পক্ষের লবিষ্টদের অংশ গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যা বিগত মিশর জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়া লবিষ্টদের ৪ গুন। ফলে লবিষ্টদের এই ব্যাপক উপস্থিতি জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।’

এম হাসান

×