ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

কবি আবুল হাসনাতের কবিতাসমগ্র গ্রন্থের প্রকাশনা

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১৩, ৮ নভেম্বর ২০২২

কবি আবুল হাসনাতের কবিতাসমগ্র গ্রন্থের প্রকাশনা

বাংলা একাডেমিতে আবুল হাসনাতের কবিতাসমগ্র গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা

সূর্যোদয় দেখে ফিরে যায়/দাঁড়িয়ে থাকে চোখের পাতায়/এই রং, নিসর্গ/আর পুণ্য প্রাণ লাবণ্য ...। এমন করেই কবিতার পঙ্ক্তিমালায় প্রকৃতির সঙ্গে প্রাণের সম্পর্ক খুঁজে নিয়েছেন কবি মাহমুদ আল জামান। আবুল হাসনাত নামে সকলের পরিচিত এই কীর্তিমান সাহিত্য সম্পাদক ও কবি কাব্য রচনায় ধারণ করেছেন ছদ্মনামটি। গত ১ নভেম্বর ছিল তার প্রয়াণবার্ষিকী।

এ উপলক্ষে তিন কাব্যগ্রন্থের সমন্বয়ে প্রকাশিত হলো প্রয়াত এই কবির কবিতাসমগ্র । জ্যোৎস্না ও দুর্বিপাক, কোনো একদিন ভুবনডাঙায়, ভুবনডাঙার মেঘ ও নধর কালো বেড়াল এই তিন গ্রন্থের সঙ্গে অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত কবিতাগুলো ঠাঁই পেয়েছে এক মলাটে। অনন্যা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কবিতাসমগ্রের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো সোমবার। হেমন্তের বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, সম্পাদক আবুল হাসনাতকে অনেকেই চেনেন, তবে তিনিই যে ষাটের দশক থেকে মাহমুদ আল জামান নামের আড়ালে কবিতা লিখে গেছেনÑসেই তথ্য অনেকেরই অজানা। যাপিত জীবনে নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ মানুষটি কবি হিসেবেও নিজেকে আড়ালেই রেখেছিলেন। তার কবিতা আর মনোগত অভিপ্রায় বিচিত্র বিস্তারের সাক্ষী।

সেখানে আবেগ যেমন আছে, তেমনই আছে স্মৃতির কথন, আছে বর্তমানের হাহাকার। সম্পাদনায় হাসনাত ছিলেন নৈর্ব্যত্তিক, কিন্তু কবিতায় ছিলেন তার বিপরীত। এখানে তার ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, আবেগ মান-অভিমান জায়গা করে নিত। তাই তাকে আরও ব্যাপকভাবে খুঁজে পাওয়া যায় কবিতায়। তার কবিতাসমগ্র পড়লে রুচিস্নিগ্ধ এক কবির দেখা পাওয়া যায়।
কালি ও কলম সম্পাদক সুব্রত বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, কথাশিল্পী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌভিক রেজা।

এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন আবুল হাসনাতের সহধর্মিণী নাসিমুন আরা হক মিনু। স্বাগত বক্তব্য দেন অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন অভিনয়শিল্পী রামেন্দু মজুমদার ও ত্রপা মজুমদার। আবুল হাসনাতকে নিবেদিত কবিতাপাঠ করেন কবি মাহবুব সাদিক, হাসান হাফিজ, সুহিতা সুলতানা ও পিয়াস মজিদ।
ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, সময়ের প্রয়োজনে লিখেছেন আবুল হাসনাত। তিনি প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অ্যালবাম ‘ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ’ তৈরি করেছেন। তার কবিতায় অনুচ্চারিত দুঃখ বেদনা ফুটে উঠেছে। তার অবদান থাকলেও জীবদ্দশায় তার কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি।  সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আবুল হাসনাত এমন একজন মানুষ যিনি একসঙ্গে দুটি সত্তা ধারণ করতেন।

একইসঙ্গে রাজনীতি এবং লেখালেখি করতেন। স্বাধীনতার পরে যখন তার স্বপ্নগুলো বিলীন হয়ে যায় তখন তিনি কবিতা লেখালেখি শুরু করেন। মাহমুদ আল জামান নামে কবিতায় নিমগ্ন ছিলেন আবুল হাসনাত।
মতিউর রহমান বলেন, হাসনাতের লেখায় বহু ধরনের, বহু মিশ্রণ উঠে এসেছে। তার কথা বলা কবিতায় দেশের কথা, রাজনীতি সমাজতন্ত্র প্রথম থেকেই ছিল। আর দুঃখ বেদনা আনন্দ হাসি তার কবিতার ভাষা। সংবাদের এই সাহিত্য সম্পাদক দীর্ঘদিন কালি ও কলম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সমান্তরালে কবিতা লিখেছেন আবুল হাসনাত। কবিতা লেখালেখিতে সফল হলে কখনও কোনো সাহিত্যে পুরস্কার পাননি। নূরুল হুদা বলেন, আবুল হাসনাত সারাজীবন সম্পাদনায় ছিলেন। লেখকদের লেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। নিজের লেখালেখিতে বেশি সময় পাননি। কিন্তু স্বল্প সময়ের লেখালেখিতে তিনি অনেক অর্জন করেছেন।
নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, আবুল হাসনাতকে সবাই চিনে সম্পাদক হিসেবে। কিন্তু তিনি একজন কবি সেটা অনেকে জানতেন না। তার কবিতা আর কিশোর উপন্যাস মাহমুদ আল জামান নামে প্রকাশ হতো। কিন্তু আবুল হাসনাত আর মাহমুদ আল জামান যে একজন সেটা অনেকে জানতেন না।
মাহবুব উল আলম চৌধুরী স্মরণ ॥ বাংলা একাডেমির আয়োজনে সোমবার সকাল একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক ও ভাষাসংগ্রামী মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ৯৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্মরণের এ আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান।

মাহবুব উল আলম চৌধুরী ও তাঁর ‘সীমান্ত’ পত্রিকা শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, মাহবুব উল আলম চৌধুরী সম্পাদিত সীমান্ত পত্রিকাটি আমাদের সাময়িকপত্রের ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। ভারতভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র তিনমাসের মাথায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী জেলা চট্টগ্রাম থেকে সীমান্ত পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ এই পাঁচ বছরই ছিল সীমান্ত-এর আয়ুষ্কাল।

সম্পাদক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ধারণা- মতে এই সংক্ষিপ্ত সময়কালে সীমান্ত-এর আটচল্লিশটির মতো সংখ্যা বেরিয়েছিল। বৈরী পরিস্থিতিতে এবং সাম্প্রদায়িক উন্মত্ততার কালে সীমান্ত পত্রিকার দাঙ্গাবিরোধী সংখ্যা প্রকাশ করে মাহবুব উল আলম চৌধুরী প্রজ্বলিত করেছেন চেতনার অনির্বাণ শিখা। তিনি বলেন, প্রথম জীবনে যে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক চেতনা, সংগ্রামী মানবতা ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের সঙ্গে একাত্মতাবোধ তাকে প্রাণিত করেছিল, আমৃত্যু তিনি তাকে ধারণ ও বহন করেছেন।

×