ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১

জন্মদিনে গান কবিতা ও কথনে রণেশ দাশগুপ্তকে স্মরণ

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

জন্মদিনে গান কবিতা ও কথনে রণেশ দাশগুপ্তকে স্মরণ

.

জীবনের বহুমাত্রিক পথ পেরুনো এক অনন্য ব্যক্তিত্ব রণেশ দাশগুপ্ত। সেই সুবাদে সাংবাদিকতার সমান্তরালে যুক্ত ছিলেন রাজনীতিতে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় কারান্তরীণ অবস্থায় মুনীর চৌধুরীকে ‘কবর’ নাটক লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এমনকি জেলখানাতেই কবর নাটক মঞ্চায়নে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই মানুষটিই আবার অন্তর্গত সৃষ্টিশীলতার তাগিদে রচনা করেছেন সাহিত্য। সংগঠক হিসেবে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠায়ও রয়েছে তার অবদান। একুশে পদকজয়ী এই মনীষীর ১১৪তম জন্মদিন ছিল বুধবার। এ উপলক্ষে উদীচীর পক্ষ থেকে স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গানের সুরে, কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে ও কথনে সজ্জিত ছিল এ অনুষ্ঠান। শীতল সন্ধ্যায় তোপখানা রোডের উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদসহ ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘কোন আলোকে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে’ গানটি সমবেতভাবে পরিবেশন করেন উদীচী সংগীত বিভাগের শিল্পীরা। এছাড়া সাংস্কৃতিক পর্বে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী আবৃত্তি বিভাগের বাচিক শিল্পী আতিকুজ্জামান মির্জা ও শিখা সন গুপ্তা।
রণেশ দাশগুপ্তর জীবন, আদর্শ ও রচনা নিয়ে আলোচনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি নিবাস দে, প্রবীর সরদার, জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, কোষাধ্যক্ষ বিমল মজুমদার প্রমুখ। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাবিবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। 
সূচনা বক্তব্যে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, একজন তুখোড় সাংবাদিক, বিজ্ঞ সাহিত্যিক, অসামান্য প্রাবন্ধিক হিসেবে রণেশ দাশগুপ্ত তাঁর জীবনকালে সবসময়ই তার আশপাশের মানুষকে শিখিয়ে গেছেন কীভাবে সৎ থেকে, নিজের আদর্শে অটল থেকে সমাজ পরিবর্তনের স্বার্থে ইতিবাচক কাজ করা যায়। আজীবন একটি অসাম্প্রদায়িক মৌলবাদমুক্ত সাম্যবাদী সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন তিনি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি অমুসলিম হয়েও পুরান ঢাকার মুসলিম প্রধান অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন। যা কিনা দলমত বা সাম্প্রদায়িক চিন্দাভাবনা দূরে রেখে রণেশ দাশগুপ্তর জনপ্রিয়তাকে প্রমাণ করে। 
বিমল মজুমদার বলেন, নিজের লেখা ও কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে রণেশ দাশগুপ্ত বারংবার সবাইকে সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। নব্বইয়ের দশকে যখন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে বিপর্যয় নেমে আসে তখনো তিনি নিজের লেখনীর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে লড়াইয়ে ময়দানে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। 
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর শিল্পী-সংগ্রামী সত্যেন সেনসহ কয়েকজন প্রগতিশীল মুক্ত চিন্তার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রণেশ দাশগুপ্ত প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। যে কোনো ধরনের অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার থাকার শিক্ষা দিয়েছেন রণেশ দাশগুপ্ত। তিনি মনে করতেন, শিল্পীরা যখন সংগঠক হিসেবে আবির্ভূত হন তখন সংগঠনকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। তারা আরও বলেন, এদেশের মানুষ বারবারই নিজেদের অধিকার আদায়ে রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন এবং অনেকবার প্রতারিত হয়েছেন। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও যে বৃহত্তর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষ আত্মবলিদান করেছেন, তার অনেক কিছুই পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। 
তাই অধিকার আদায় করা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে মানুষকে সব সময়ই সোচ্চার থাকতে হবে বলে মনে করেন তারা। অনুষ্ঠানে আরও কয়েকটি সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর সংগীত বিভাগের শিল্পীরা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী আবৃত্তি বিভাগের বাচিক শিল্পী আতিকুজ্জামান মির্জা ও শিখা সেন গুপ্তা। 

×