ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

উৎসবমুখর আবহে বিশ্ব সংগীত দিবস উদ্যাপিত

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:২৩, ২১ জুন ২০২৪

উৎসবমুখর আবহে  বিশ্ব সংগীত  দিবস উদ্যাপিত

শিল্পকলার নাট্যশালায় বিশ্ব সংগীত দিবসের অনুষ্ঠানে সানফ্লাওয়ার শীর্ষক অর্কেস্ট্রা পরিবেশিত হয়

সুরের স্রোতধারা প্রফুল্ল করে হৃদয়কে। অশুভের বিরুদ্ধে জাগ্রত করে শুভবোধকে। বিকশিত করে মননকে। নব নব পত্রপুষ্পে ভরিয়ে তোলে জীবনকে। কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটায়। অন্তরের সূক্ষ্ম অনুভূতিকে স্পর্শ করে উস্কে দেয় মানবিকবোধকে। তাই সংগীত ছাড়া সভ্যতা যেন বিমর্ষ কিংবা অর্থহীন। আর শুক্রবার ছিল জীবনের সঙ্গে সংগীতের নিবিড় সংযোগ স্থাপনের অনন্য এক দিন। বিশ্ব সংগীত দিবস। সুরের আগুনে অসুরকে দমন করে কল্যাণময় পৃথিবীর প্রত্যাশায় উৎসবমুখর আবহে উদ্যাপিত হয়েছে দিবসটি। কণ্ঠশিল্পী থেকে যন্ত্রশিল্পীদের মাঝে বয়ে গেছে প্রাণের প্রচ্ছ্বাস। তাদের অংশগ্রহণে বের হয়েছে বর্ণিল শোভাযাত্রা।

পরিবেশিত হয়েছে লোকসংগীত থেকে আধুনিক গান। সুরের আশ্রয়ে উচ্চারিত হয়েছে বাংলার কালজয়ী গীতিকবিদের কালোত্তীর্ণ গীতবাণী। বৈচিত্র্যময় আয়োজনে ঢাকাই সিনেমার গানের সুরে ভালোলাগার অনুভবে স্না হয়েছে শ্রোতার মন। দিবস উদ্্যাপনে পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ।সুরের আগুন ছড়িয়ে দেব সব প্রাণেপ্রতিপাদ্যে দিবসটি উদ্যাপনে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। সানফ্লাওয়ার শীর্ষক অর্কেস্ট্রার বাদনে সান্ধ্যকালীন পরিবেশনা পর্বের সূচনা হয়। ১১ জন যন্ত্রসংগীত শিল্পীর বাদনে বয়ে যায় সুরের ঝংকার। বেহালা, বাঁশিসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের সেই সুরেলা শব্দধ্বনিতে প্রফুল্ল হয় শ্রোতার মন-প্রাণ।

এরপর পরিবেশিত হয় একাডেমির শিল্পীদের সমবেত সংগীত। অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক স্বরে। সকলে মিলে গেয়ে শোনায় ঢাকাই সিনেমার সোনালি সময়ের কালোত্তীর্ণ একগুচ্ছ গান। সেসব গানের শিরোনাম ছিলÑ আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো, আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে, আয়নাতে ওই মুখ, আকাশের হাতে আছে একরাশ, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো, ফুলের কানে ভ্রমর-অন্তরা, একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সন্ধ্যার ছায়া নামে এলোমেলো হাওয়া, গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে, পিঞ্জর খুলে দিয়েছি, দিন যায় কথা থাকে এবং পিচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি ... ইত্যাদি। এর বাইরে ২০ জন খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করেনÑ ধনধান্য পুষ্পভরা, আবার এলো যে সন্ধ্যা এবং তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে ... শীর্ষক সংগীত। বিদেশী ভাষার একক সংগীত পরিবেশন করেন নিতা খন্দকার নুসরাত জাহান। ছাড়া বিদেশী ভাষার গান শুনিয়েছে ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। পরিবেশিত হয়েছে একাডেমির শিশু শিল্পীদের সম্মেলক সংগীত। একক কণ্ঠে গান শোনান সুরবালা। সবের সঙ্গে বাড়তি আকর্ষণ ছিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী শিল্পীদের ব্যান্ডদল এফ মাইনরের বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা।

পরিবেশনা পর্বের আগে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। প্রসঙ্গ কথনে অংশ নেন একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহমদ, একাডেমির সংগীত, নৃত্য আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক কাজী আফতাব উদ্দিন হাবলু।

এদিকে দিবসটি উদ্যাপনেবিশ্ব জাগাও গানের সুরে, বিশ্ব দানব পালাক দূরেপ্রতিপাদ্যে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। শুক্রবার প্রথম দিন বিকেলে বের হয়েছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সঙ্গে ছিল আলোচনাসভা, সম্মাননাপ্রদান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী মাহমুদ সেলিমের আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন বরেণ্য সুর¯্রষ্টা একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী শেখ সাদী খান। অনুষ্ঠানে সম্মাননা জানানো হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক একুশে পদকজয়ী শিল্পী সুজেয় শ্যামকে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্রশীল।

আলোচনা শেষে সংগীতানুষ্ঠানে অংশ নেয় নির্ঝরিণীএকাডেমি, লোকাঙ্গন সাংস্কৃতিক সংগঠন, রবিরশ্মি, অভ্যুদয়, গীতিশতদল, বাঁশুরিয়া বেণুকা।

আজ শনিবার দ্বিতীয়দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল ৫টায়। এদিন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসবে ঋষভ সংগীত অংগন, সপ্তরেখা শিল্পী গোষ্ঠী, সংগীত ভবন, সুরনন্দন, নন্দন, জাগরণ সংস্কৃতিচর্চা গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইনআর্টস, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, মহীরুহ, নিবেদন রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র।

×