ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘দ্য রেসপেক্টফুল প্রস্টিটিউট’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন 

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:০১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩

‘দ্য রেসপেক্টফুল প্রস্টিটিউট’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন 

শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালায় মঞ্চস্থ ‘দ্য রেসপেক্টফুল প্রস্টিটিউট’ নাটকের দৃশ্য

যারা মঞ্চনাটক দেখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য বইছে দারুণ সময়। একসঙ্গে পাঁচটি নতুন নাটক নিয়ে সেজেছে আলী যাকের নতুনের উৎসব। সেই সুবাদে বিভিন্নœ নাট্যদলের সমকালীন ঘটনাপ্রবাহসহ বিচিত্র বিষয়ের প্রযোজনাসমূহ উপভোগ করছেন নাট্যপ্রেমীরা। উৎসবের তৃতীয় দিন সোমবার সন্ধ্যায়ও একইরকম দৃশ্যপটের দেখা মেলে। এদিন দর্শকরা দেখেছেন থিয়েটার ফ্যাক্টরির প্রযোজনা দ্য রেসপেক্টফুল প্রস্টিটিউট।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। সাম্প্রদায়িকতা ও স্বার্থের বিরুদ্ধে একজন সাহসী নারীর লড়াইয়ের আখ্যান উঠে এসেছে প্রযোজনাটি। ফরাসি নাট্যকার জাঁ পল সার্ত্রে রচিত নাটকটির অনুবাদ করেছেন অংশুমান ভৌমিক। রূপান্তরের পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন অলোক বসু। 
নাটকটি প্রসঙ্গে নির্দেশক অলোক বসু বলেন, সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা-হামলার নিদারুণ প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের জীবনে। আমরা তো এসব থেকে বেরিয়ে এসে একটি সভ্য-মানবিক জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাই। সেক্ষেত্রে এ নাটকটি হতে পারে আমাদের সমাজ-শিল্প-সংগ্রামের একটি উপাদান। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে শারদীয় দুর্গাপূজার সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার পরিপ্রেক্ষিতে আমার মনে হলো এ নাটকটি নিয়ে কাজ করা যায়।

আমরা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-নাটকের মধ্য দিয়ে যে মানবতার জয়গান গাইতে চাই সে কাজটি করার দারুণ একটা সুযোগ রয়েছে এ নাটকটিতে। চেষ্টা করেছি এটা যেন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেরই একটি নাটক হয়ে উঠতে পারে।
জেসমিন আক্তার জেসি নামের এক নারীকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত হয়েছে নাটকের ঘটনাপ্রবাহ। জেসি পেশায় যৌনকর্মী হলেও শিক্ষিত, রুচিশীল আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন একজন মানবিক মানুষ। সে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার পথে রাতের ট্রেনে একটা খুনের ঘটনা ঘটে তার বার্থে।

সম্ভাব্য ঝুটঝামেলা এড়াতে তিনি কুমিল্লায় নেমে একটা হোটেলে ওঠেন। সেখানে একজন বিত্তশালী খদ্দেরও পেয়ে যন। কিন্তু জেসি জানে না, এই খদ্দের কোনো সাধারণ খদ্দের নন। এই খদ্দের একটা মিশন নিয়ে জেসির সঙ্গে রাত্রিযাপন করে। এর মাঝে হোটেলে জেসির সঙ্গে দেখা করতে আসে এক আগন্তুক। এরপর ঘটতে থাকে নানারকম অঘটন-ঘটন। ট্রেনে যে লোকটি খুন হয়েছে, তারই কাকা এই আগন্তুক।

নরেশ নামের ওই আগন্তুক একটি কলেজের শিক্ষক। তিনিও ট্রেনে ছিলেন খুনের সময়। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল পর্যায়ে চলে যাওয়ায় নরেশও নিজের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে ঘটনার মূলহোতাকে বাঁচাতে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাতে একটি স্বার্থান্বেষী শক্তিশালী মহল। পূজার সময় ম-পে দেবীর পায়ে কোরান শরিফ পাওয়া নিয়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে ব্যবহার করা হয় ট্রেনের খুনের ঘটনার সঙ্গে। এদিকে খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জেসি। তাকে হাত করতে পারলেই খুনিকে রক্ষা করা সম্ভব।

সেজন্যই কূটকৌশলে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়ে, জনতাকে উত্তেজিত করে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, অর্থের লোভ দেখিয়ে, সর্বোপরি নারীর সংবেদনশীল কোমল মনের দুর্বলতাকে ব্যবহার করে ক্ষমতাধর স্বার্থান্বেষী মহল খুনিকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। জেসিকে হাত করার নানা কৌশলী খেলা খেলতে থাকে মিস্টার চৌধুরী ও তার ছেলে বীর। এদিকে জেসিও সহজে বশে আনা যায় তেমন নারী নয়। যেমন সে বুদ্ধিমতি, তেমনি সাহসী।

একইসঙ্গে সত্যনিষ্ঠ ও ন্যায়পরায়ণ এবং সংবেদনশীল। সেই বাস্তবতায় শুরু হয় মিথ্যার সঙ্গে সত্যের, স্বার্থের সঙ্গে নিঃস্বার্থের, ধুরন্ধর কৌশলের সঙ্গে সরল-অটল দৃঢ়তার দ্বন্দ্ব-সংঘাত। ঘটত নাটকীয় ঘটনা। এভাবেই ঘটন-অঘটন-দুর্ঘটনার রুদ্ধশ্বাসে কাহিনী এগিয়ে যায় পরিণতির দিকে। 
প্রযোজনাটিতে জেসির চরিত্রে রূপ দিয়েছেন সঞ্জিতা শারমীন বৃষ্টি। বীর ও নরেশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রমিজ রাজু ও দিপু মাহমুদ। চৌধুরী চরিত্রের রূপায়ন করেছেন অলোক বসু। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাছিরুন নাহার বৃষ্টি, আশা আক্তার, বিপাশা সাইদ ও সাকিফ মাহদী। 
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় ও মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ছয়দিনের নাট্যোৎসবে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একই মঞ্চে মঞ্চস্থ হবে বটতলার নাটক ‘সখি রঙ্গমালা’। শাহীন আখতারের উপন্যাস অবলম্বনে প্রযোজনাটির নাট্যরূপ দিয়েছেন সামিনা লুৎফা নিত্রা ও সৌম্য সরকার। নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার।

×