ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পের বৈভবে দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী শুরু

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১০, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

শিল্পের বৈভবে দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী শুরু

শিল্পকলায় দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা

শিল্প সবাইকে টানে না কিংবা সবার কাছে শিল্পকর্ম সমাদৃত হয় না। তবে যারা শিল্পের অনুরাগী, তাদের  জন্য এসেছে দারুণ এক সময়। সেই সুবাদে শিল্পের বহুমাত্রিকতায় বর্ণিল রূপ নিয়েছে শহর ঢাকা। এক আয়োজনে উপস্থাপিত হচ্ছে দেশ-বিদেশের চার শতাধিক শিল্পীর সৃজিত ছয় শতাধিক শিল্পকর্ম। দেখা মিলছে বিচিত্র বিষয়ের নানা মাধ্যমে আঁকা চিত্রকর্ম থেকে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য।

রয়েছে মুগ্ধতার প্রতিচ্ছবিময় বিবিধবিষয়ক স্থাপনা শিল্প। ভালো লাগার অনুভব ছড়িয়ে দিচ্ছে আলো-ছায়ার খেলাময় আলোকচিত্রসমূহ। শুধু কী তাই? উপস্থাপিত হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পারফর্মেন্স আর্ট।  রয়েছে শিল্পসহ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটবিষয়ক সেমিনার। শিল্পের এমন বৈভব ছড়িয়ে বৈচিত্র্যময়তাকে ধারণ করে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল বা দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী।

শিল্পকলা একাডেমির নববিন্যাসে সজ্জিত জাতীয় চিত্রশালার সাতটি প্রদর্শনালয়ে চলছে এই প্রদর্শনী। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ১৯তম আসরটি উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাস্তচ্যুত মানুষের বেদনাকে ধারণ করে এবারের বিয়েনালের প্রতিপাদ্য হয়েছে ‘হোম অ্যান্ড ডিসপ্লেসমেন্ট’।
আয়োজনের সঙ্গে এশিয়ার নামটি জুড়ে থাকলেও বর্তমানে এটি এশিয়ার সীমানা পেরিয়ে ধারণ করেছে সমগ্র বিশ্বের শিল্পকে।  বিয়েনালের সূত্র ধরে বিশ্বের নানা দেশের শিল্পীরা সমাগত হয়েছেন রাজধানী ঢাকায়। এই  শৈল্পিক আয়োজনে এক সুতোয় মিলে গেছে এশিয়া, আমেরিকা থেকে আফ্রিকা মহাদেশের শিল্পীরা।

অন্যদিকে, এবারের ১৯ততম দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগের যে কোনো আসরকে। এবারের আসরে বাংলাদেশসহ অংশ নিচ্ছে ১১৪টি দেশ। এ সব দেশের ৪৯৩ শিল্পীর সৃজিত ৬৪৯টি শিল্পকর্মের সম্মিলন ঘটেছে এই শিল্পোৎসবে।
বৃহস্পতিবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভাচুর্য়ালি যুক্ত হয়ে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর, এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের জুরি বোর্ডের সদস্য বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী ও পোল্যান্ডের শিল্প সমালোচক জ্যারোল্ড­সুহান। স্বাগত ভাষণ দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।   
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্র্যান্ড ও সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করেন  দেশ-বিদেশের নয় কৃতী শিল্পীকে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিল্পীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ বছর  বিয়েনালের তিনটি গ্র্যান্ড পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের সুশান্ত কুমার অধিকারী ও ইয়াসমীন জাহান নূপুর এবং নেদারল্যান্ডসের হ্যারল্ড স্কোলে।

সম্মানসূচক ছয়টি পুরস্কার পেয়েছেন ফারিহা জেবা, জয়তু চাকমা, মামুর আহসান মাহতাব, মঈনুল ইসলাম পল, সুমন চন্দ্র দাস এবং পর্তুগালের এনা সিলভিয়া মালহডো। গ্র্যান্ড পুরস্কারজয়ী শিল্পীরা পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকার সম্মানী। সম্মানসূচক পুরস্কার অর্জনকারী শিল্পীরা পেয়েছেন তিন লাখ টাকা সম্মানী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বিয়েনালের প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে উদ্বাস্তু জীবনের বেদনার্ত অধ্যায় মেলে ধরা হয় প্রতিটি পরিবেশনায়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ বিশ্বের বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবচিত্র মেলে ধরা হয় কোরিওগ্রাফি ও  নাচের পরিবেশনায়। রোহিঙ্গানামা শিরোনামের নৃত্যের আশ্রয়ে ওই জনগোষ্ঠীর প্রাচীন ইতিহাসের সমান্তরালে  নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়ার দুর্দশাকে মেলে ধরা হয়।

লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা এবং আসাদুজ্জামান নূর ও ত্রপা মজুমদারের ধারাভাষ্যে সজ্জিত পরিবেশনাটি হয়ে ওঠে হৃদয়গ্রাহী। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুত শিশুদের বিবর্ণ জীবনের গল্প মেলে ধরা হয় আরেকটি পরিবেশনায়। বিয়েনালে অংশগ্রহণকারী ১১৪টি দেশের পতাকা মেলে ধরা হয় একটি উপস্থাপনায়।
বিয়েনাল উপলক্ষে পুরো শিল্পকলা একাডেমি সেজেছে নববিন্যাসে। একাডেমির মাঠে ছন দিয়ে তৈরি কুঁড়েঘরের আদলে গড়া বিভিন্ন স্টলে শোভা পাচ্ছে মৃৎশিল্প, কারুশিল্প থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। অন্যদিকে, চিত্রশালা পাজার সাতটি প্রদর্শনালয় সেজেছে বহুমাত্রিক শিল্পসম্ভারে। জল রং, তেল রং, ছাপচিত্রসহ বিবিধ মাধ্যমে চিত্রিত দেশ-বিদেশের শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর কাজ উপস্থাপিত হয়েছে।

সে সব চিত্রপটে উদ্ভাসিত হয়েছে সমকালীন নানা বিষয়। করোনা মহামারির আগ্রাসন থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ভয়াবহতা ঠাঁই পেয়েছে ক্যানভাসে। বাদ যায়নি জনদুর্ভোগের চিত্রও। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে মাসব্যাপী এই শিল্পের আসর। শিল্পকলায় চলমান আয়োজনটি প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

×