ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যান্ত্রিকতায় হারিয়ে গেছে প্রকৃত কণ্ঠ

আনন্দকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ৫ অক্টোবর ২০২২

যান্ত্রিকতায় হারিয়ে গেছে প্রকৃত কণ্ঠ

আশরাফ বাবু

‘শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে’ গানটির শুরুটা কিভাবে হয়?
১৯৮৯ সালের শেষের দিকে এ গানটি রিলিজ হয়। এর আগে ৮৮ দিকে ডিফরেন্ট টাচ ব্যান্ডের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। আমি তখন গিয়েছিলাম সে ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে কাজ করতে। আমাদের খুলনার সেই সময়ের ইভস ব্যান্ডের তজু ভাই আমাকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি তাদের অলরেডি তিনজন ভোকাল আছেন।

এরপর একসময় তাদের গিটারিস্ট আলী আহমেদ বাবু ভাই তাদের ব্যান্ডের  রেকডিংয়ে যাবার প্রস্তুতি নেয়। তিনি গানও করতেন। তিনি আমার কথা ও সুরের গান করতে চান। তারপর আমি বাবু ভাইয়ের জন্য এ গানটির কথা ও সুর করি। তিনিই ডিফরেন্ট টাচ ব্যান্ডে প্রথম গানটি করেছেন। তার কণ্ঠেই গানটি প্রথম প্রকাশ হয়।
নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই জানে গানটি ডিপারেন্ট টাচ ব্যান্ডের মেজবাহ করছেন। এছাড়া আপনি গানটির স্রষ্টা এটিও অনেকে জানে না। এর কারণ কি?
আলী আহমেদ বাবু ভাই ডিফরেন্ট টাচ ব্যান্ড থেকে বের হয়ে যাবার পর গানটি স্টেজের জন্য মেজবাহ তুলে নেন। এরপর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও এখন তিনি নিয়মিত এটি করছেন। দীর্ঘ  সময় শ্রোতারা তার কণ্ঠে গানটি শোনার কারণেই হয়তো আসল শিল্পী আড়ালে চলে গেছেন।
তবে বাবু ভাইও গানটি করেন এখনো। এছাড়া ডিফরেন্ট টাচ বা মেজবাহ এ গানটি করার সময় নিজ থেকে কোথাও আমার নাম উল্লেখ করেন না।
এ জন্য আমি বেশ কষ্ট পাই। যিনি গানের স্রষ্টা তার নাম না বললে তো নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে না কে এ গান লিখেছেন বা সুর করেছেন।
গেল কয়েক বছর গীতিকার শিল্পী ও সুরকারেরা গানগুলো তাদের নামে কপিরাইট করছেন। সেক্ষেত্রে আপনি কি করছেন? এ গান থেকে কোন রয়ালিটি পেয়েছেন?
ইউটিউবে এ গান থেকে অনেকেই উপার্জন করছে। কিন্তু আমি পাচ্ছি না। এ গান থেকে এখন পর্যন্ত কোন রয়ালিটি পাইনি। যেখানে গান করার সময় গানের স্রষ্টার নামই বলে না সেখানে তারা রয়ালিটি দেবে কি করে? তবে আমার এ গানের বাইরেও আরও বেশ কিছু জনপ্রিয় গান আছে। আমি খুব শিগগিরই এগুলোর কপিরাইট করে নেব।
এ সময়ের গানে আপনি কি কি পরিবর্তন দেখেন?
আমাদের শুরুর দিকে যখন গান করা হতো তখন সুরকার-গীতিকার, শিল্পী একসঙ্গে বসতাম। সবাই গানের বিষয়টা ঠিক আছে কিনা দেখতাম। শিল্পীর কণ্ঠে প্রতিটি শব্দ ঠিক মতো উচ্চারণ হবে কিনা সেটা দেখতাম। সব ঠিক থাকলেই সেই গানের রেকর্ডে যেতাম।
প্রত্যের শিল্পীর কণ্ঠে সব ধরনের শব্দ ভালভাবে যায় না। এছাড়া একটা গানে যা ব্যবহার করা হতো সেটা দক্ষ মিউজিশিয়ানদের দিয়ে করা হতো। এখন তো একজনই সব করছেন। যে গিটার বাজাচ্ছেন সেই লুপ থেকে বাঁশি বাজাচ্ছেন। এছাড়া এখন যান্ত্রিকতায়  হারিয়ে গেছে প্রকৃত কণ্ঠ। যার কারণে মানুষ পুরনো গানগুলোই শুনছেন।
নতুন প্রজন্মের জন্য কি বলবেন?
নতুনদের অনেকেই ভালো গান করছেন। অনেকের কথা-সুরও মাঝে মধ্যে মন ছুঁয়ে যায়। কিন্তু সারা বছরে একটা-দুটো গান দিয়ে একটা কোনো সেক্টর চলেনা। এ জন্য নতুনদের গানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে অবশ্যই সেটি যেন ভাল গান হয়।

×