
সংবাদ সম্মেলন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের নেতৃত্বে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতিকে লাঞ্ছিত করা ও হামলার অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন কর্মকর্তা এই ঘটনার ইন্ধন দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে হিসাব শাখার কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মাখনের কক্ষে ও সামনে এ ঘটেছে। এ দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সমিতির সভাপতি এটিএম এমদাদুল আলমের কক্ষে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তিনি নিজেই জানান।
এ সময় তিনি হামলকারী ও ইন্ধনদাতাদের বিচারের আওতায় দাবি জানান। একইসঙ্গে হামলায় নেতৃত্ব দানকারী নেতাই পোষ্য কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলন শেষে বিকেল ৪টায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে প্রশাসন ভবনের পেছনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
সংবাদ সম্মেলন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুলাই থেকে বয়সসীমা বৃদ্ধি, পোষ্যকোটায় শর্ত শিথিলসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে কর্মকর্তারা। তবে প্রশাসনের নিদের্শে কিছু কর্মকর্তা তাদের কাজ অব্যহত রেখেছিলেন। দুপুরের দিকে হিসাব শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জাকির হোসেন পাশের রুমে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। এ সময় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি খবর পেয়ে তার রুমে গিয়ে তাকে কাজ করতে নিষেধ করেন। এরই একপর্যায়ে আব্দুল হান্নান, মীর জিল্লুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, মীর মোর্শেদুর রহমান, আসাদুজ্জামান মাখন, জাহিদুল ইসলাম, তবারক হোসেন বাদল (ছাত্রলীগ সম্পাদকের বাবা) সহ কয়েকজন কর্মকর্তা সমিতির সভাপতির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।
পরে সেখানে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও চাকরিপ্রত্যাশী বিপুল হোসেন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মজুমদার, ছাত্রলীগ কর্মী বাঁধন, শাহিন আলম সহ ২০/২৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী উপস্থিত হন। এ সময় কর্মকর্তাদের ইন্ধনে ও ছাত্রলীগ সম্পাদক জয়ের নেতৃত্বে তাকে লাঞ্ছিত, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, তুই-তুকারি করা, মারতে উদ্যত এবং হামলা চালানো হয় বলে সমিতির সভাপতি অভিযোগ করেন। পরে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট সহ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত হয়ে এমদাদকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
সংবাদ সম্মেলনে এমদাদ বলেন, ‘আমি হিসাব শাখার একটি রুমে গিয়ে কাজ করতে নিষেধ করলে কয়েকজন কর্মকর্তা রুমে ঢুকে বলে কাজ হবে। এ সময় হান্নানসহ ৮/১০ জন আমার উপর মারমুখী আচরণ করে। রুমের বাইরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়ের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন নেতাকর্মী আমাকে লাঞ্ছিত করে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারতে উদ্যত হয়। তারা বাইরে নিয়ে আমাকে পেটানোর হুমকি দেয়। ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে গুটিকয়েক কর্মকর্তা প্রশাসনের ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রক্টর উপস্থিত থাকলেও কোনো কিছু করেনি। ছাত্রলীগের যারা ছিল তারা অনেকেই পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়ে পোষ্য কোটার পক্ষের আন্দোলন বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কিছু ছাত্র বিভিন্ন অফিসে কাগজপত্র সংল্লিষ্ট কাজের জন্য গিয়েছিল। কিন্তু কর্মকর্তরা কাজ করছিল না। এমন কথা শুনে প্রশাসন ভবনে গিয়ে দেখি লোক জড়ো হয়েছে। যারা সেখানে ছাত্র ছিল আমি তাদের সরিয়ে নিয়ে এসেছি। আমি শেষ মুহুর্তে সেখানে গিয়েছিলাম।’
কর্মকর্তা সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর মোর্শেদুর রহমান বলেন, ‘একাউন্টস ডিরেক্টর ফাইল স্বাক্ষর করার কারণে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি তাকে ঘুষি মারতে গিয়েছিল। আমরা সেখানে পরিস্থিতি শান্ত করতে গিয়েছিলাম। পরে আর আমরা কোনো ঝামেলা করিনি।’
হিসাব শাখার পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাকে কাজ থেকে বিরত থাকতে বললে আমি প্রশাসনিক নির্দেশে কাজ করছি বলে তাকে জানাই। এরই একপর্যায়ে অন্যান্য কর্মকর্তারা ঢুকলে সেখানে বাকবিতণ্ডা হয়।’
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। যারা কাজ করতেছিল তাদের সাথে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতিসহ অন্যদের বাকবিতণ্ডা চলছিল। পরে আমি অনুরোধ করে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতিকে তার রুমে দিয়ে আসি। কর্মকর্তারা লিখিত দিলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
এম হাসান