ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অপ্রতুল বাজেটে ক্ষোভ সংস্কৃতিকর্মীদের

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার 

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ৩ জুন ২০২৩

অপ্রতুল বাজেটে ক্ষোভ সংস্কৃতিকর্মীদের

শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট

বর্তমান সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গি তার সঙ্গে সেই পাকিস্তানি আমলের দৃষ্টিভঙ্গির খুব একটা পার্থক্য দেখছি না। কারণ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী সংস্কৃতির গুরুত্বের কথা বলেন, কিন্তু অর্থ বরাদ্দে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। কোন অপশক্তি এখানে ঘাপটি মেরে বসে আছে যারা প্রধানমন্ত্রীর আকাঙ্খাকে ধূলিস্যাৎ করে দিতে চায়; সেটাও চিহিৃত করা প্রয়োজন। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বাজেটের দাবি উত্থাপন করলে তারা বলে আমরা এত টাকা চাই কেন? আমরা টাকা চাই না, আমরা অবকাঠামোর সুযোগ সুবিধা চাই।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি খাতে কম বরাদ্দ রাখার প্রতিবাদ ও বরাদ্দ বাড়ানোর দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে এ মন্তব্য করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সংস্কৃতি খাতে প্রস্তাবিত বাজেট ধরা হয়েছে ৬৯৯ কোটি টাকা, যা গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের তুলনায় ৩৭ কোটি টাকা বেশি। শতকরা হিসেবে এবারের বাজেটের শূন্য দশমিক শূন্য ৯১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে সংস্কৃতি খাতে। তবে গতবছরের তুলনায় সামগ্রিক বাজেটের আকার বাড়লেও সেই অনুপাতে সাংস্কৃতিক খাতে বরাদ্দ বাড়েনি বলে জানান তিনি। 

শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, সংস্কৃতি খাতে বাজেট অপ্রতুল হওয়ার জন্য দায়ী সরকারের ভেতরের একটি শক্তি। এই অপশক্তি সংস্কৃতি খাতে বাজেট কমিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নানা কথা বলে বিভ্রান্ত করছেন। যখনই আমরা ১ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলি, তখনই আমলারা বলে, সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ হলো অপচয়। অপচয় কারণ এ সংস্কৃতি আমলাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

তিনি আরো বলেন, সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই মানুষের চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আনতে চাই। মানুষকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলতে চাই। মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু চাইলেই তা হয়ে যায় না। শিল্পীরা চার বছর আগে যে ভাতা পেতো এখনোই তা পাচ্ছে। ৫০০ টি উপজেলায় একটি করে মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করতে হবে। প্রত্যেক উপজেলায় সঙ্গীত, নাটক, আবৃত্তি, চারুকলা এবং নৃত্যের স্থায়ী প্রশিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু আমাদের কথায় কেউ কর্র্র্ণপাত করছে না। 

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ বলেন, সংস্কৃতির বাজেট নিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সংস্কৃতি কর্মীদের কথায় তিনি কর্ণপাত করেন না। তিনি সংস্কৃতির বাইরের কজন লোককে দিয়ে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করতে চান। সংস্কৃতির কোন খাতে কী পরিমাণ বাজেট প্রয়োজন, সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই। আগামী এক বছর আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি কর্মকান্ডে চোখ রাখব। পরে তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করবো। 

তিনি বলেন, বাজেটে যে টাকাই সংস্কৃতি খাতের জন্য বরাদ্দ হোক না কেন, জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক, যা পরে সংস্কৃতি চর্চায় ব্যয় করা হবে। বাজেটের অনুৎপাদনশীল খাত ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকেও সাংস্কৃতিক অবকাঠামো ও সংস্কৃতি কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে বাজের বরাদ্দের আবেদন জানান তিনি।

সমাবেশে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল চন্দন রেজা, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান, নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মিনু হক, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। 

এমএস

×