ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দাবি পাল্টিয়ে এবার ১৩ দফায় ইবি ছাত্রলীগ কর্মীরা

ইবি সংবাদদাতা 

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ৩০ মে ২০২৩

দাবি পাল্টিয়ে এবার ১৩ দফায় ইবি ছাত্রলীগ কর্মীরা

উপাচার্যের কার্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্যের কাছে ১৩ দফা দাবি পেশ করেছেন শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। মঙ্গলবার (৩০ মে) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে তারা উপাচার্যের কার্যালয়ে এসব দাবি পেশ করেন। দাবি আদায় না হলে পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন তারা।

এ সময় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ফাহিম ফয়সাল, রতন রায়, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আসিফ আহমেদ শিমুল, ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের রাকিবসহ প্রায় ২০ জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, প্রশাসনের পক্ষে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.  আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন ও জয়শ্রী সেন উপস্থিত ছিলেন। 

গুলো হলো, গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল, বিদ্যুৎ বিভ্রাট সমস্যা নিরসন, সুপেয় পানীর ব্যাবস্থা, পর্যাপ্ত গতি সম্পন্ন ওয়াইফাই ব্যবস্থা, সব হলের ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধি, ক্যাম্পাস নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, লাইব্রেরীতে নিজস্ব বই সংরক্ষণ ও রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা, জিমনেশিয়াম সপ্তাহে সাতদিন খোলা রাখা, প্রশাসন কর্তৃক নিয়মিত খেলাধুলার ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে পর্যাপ্ত আলো ও স্থাপনাগুলো নিয়মিত সংস্কার করা, মেডিকেলে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত, পর্যাপ্ত বাস নির্ধারণ এবং প্রতিটি হল থেকে বিদায়ী ব্যাচের সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা।

এসব দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের নির্দিষ্ট একটা পদ্ধতি রয়েছে। বললেই তো একটা সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। আমরা ইতোমধ্যেই ছাত্রলীগের আগের দাবিগুলো নিয়ে মিটিং করেছি। সমস্যাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু দাবি আদায়ে কথায় কথায় গেইট আটকানো এটা তো ভালো না।’

এর আগে দুপুর পৌনে ১টায় দিকে আন্দোলনকারীরা প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদের কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে প্রক্টর দাবিগুলো নিয়ে তাদেরকে উপাচার্যের কার্যালয়ে নিয়ে যান। তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামান্য পরিমান চলাচলে সমস্যা হোক এটা কাম্য নয়। শিক্ষার্থীরা গেইট আটকানোর মতো সিদ্ধান্ত তখনই নেয় যখন আর উপায় থাকে না। এখানে যারা আছে তারা প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত, প্রথম সারির কর্মী। নিরুপায় হয়ে তারা সেখানে গিয়েছিল।
তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। ছাত্রলীগের দাবিগুলোর সঙ্গে তাদের দাবিগুলো এক। ছাত্রলীগের যে দাবিগুলো ছিল তা যদি বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে আর তাদেরকে এভাবে গেইট আটকাতে হতো না। ভবিষ্যতে যেন আর গেইট বন্ধ করা না লাগে আপনারা সেই পদক্ষেপ নিন।’

নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগের দেওয়া ৩৩ দাবির যদি সামান্য বাস্তবায়নও করতেন। তাহলে এই প্রশাসন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশাসন হতো। সাধারণ ছাত্রদেরকে আর ১২ দফা দাবি নিয়ে গেইট আটকাতে হতো না। তাদের ক্লাস আছে, পরীক্ষা আছে, তাদেরকে দাবি আদায়ে কেন আন্দোলন করতে হবে? এখানে যারা দাবি নিয়ে এসেছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে সবসময়ই থাকবে। আমরা তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি।’

এর আগে গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় প্রক্টর আন্দোলনকারীদের সাথে বসে সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। যদিও ছাত্রলীগ নেতাদের ‘ইঙ্গিতেই’ আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। এসময় ছাত্রলীগের একাধিক সহ-সভাপতিসহ অন্য নেতাকর্মীরাও ছিলেন। এদিকে একই সময় অর্থাৎ বিকাল ৪টার দিকে উপাচার্যের বাঙলোতে সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। সিন্ডিকেটে ছাত্রলীগের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়েই এই আন্দোলনের সূত্রপাত বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেষ্ঠ্য অধ্যাপকরা।

আন্দোলনের ফলে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও শৈলকূপাগামী বাসসমূহ আটকে পড়েন। ফলে নবীন শিক্ষার্থীরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আটকে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে অনেকে লাইন বাসে শহরে ফিরেন। ‘পান থেকে চুন খসলেই’ ফটক আটকিয়ে আন্দোলনকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করেন পরিবহন প্রশাসক। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাড়াও বিভিন্ন ছাত্র-শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, ঠিক কি দাবিতে আন্দোলন চলছে এ ব্যাপারে জানতেন না আন্দোলনকারীরা। গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে একাধিক আন্দোলনকারী একেকরকম দাবির কথা জানিয়েছেন। ইতোপূর্বে প্রশাসনের কাছে দেওয়া ছাত্রলীগের ৩৩ দফার বিষয়টি জানালেও পরে তারা সাত দফা দাবির কথা জানান। 

অন্যদিকে, কয়েকজন নেতাকর্মী আন্দোলনকারীদের দাবি, গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল, বিদ্যুত বিভ্রাট নিরসন, সুপেয় পানি ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সমস্যা ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা। তবে পরে আবার তারা পাঁচ দফা দাবির কথা জানিয়েছেন। এদিকে প্রক্টরের বলা দাবিগুলো ছিল আরো ভিন্ন। অন্যদিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত জানিয়েছেন, ৪ দফা দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। ছাত্রলীগের সাথে এই আন্দোলনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

এমএইচ

×