ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উপবৃত্তি যেন শিশুদের বেতন, বিদ্যালয়ে বাড়ছে উপস্থিতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩; আপডেট: ১৪:৫১, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

উপবৃত্তি যেন শিশুদের বেতন, বিদ্যালয়ে বাড়ছে উপস্থিতি

কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ছবি: জনকণ্ঠ

প্রিতি, রোকাইয়া, রাকিব ৫ম শ্রেণির ছাত্র। কথা হচ্ছিল তাদের সঙ্গে। আনন্দ, উল্লাস করছিল চরআলগী নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। কথা বলতে বলতে বিভিন্ন প্রশ্নে শিশুরা হাসতে হাসতে বলেন, আমরা সরকারি টাকায় লেখাপড়া করি। শেখ হাসিনা আমাদের পোশাক, ব্যাগ, জুতা, বই, সকল কিছু ফ্রি দিতেছে। তাইলে লেখাপড়া করবো না কেন? 

শুধু চরাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানেই নয়ম উপজেলার ২শ’ ৩৮টি বিদ্যালয়ের ৪২ হাজার ছাত্র/ছাত্রীর মনে করে সরকারের দেওয়া উপবৃত্তি মানে শিশু শিক্ষার্থীদের কাছে মাসিক বেতন। 

প্রাইমারি স্কুল মানেই শিশু শিক্ষার্থীদের হেসে খেলে বেড়ানো। এই হাসি-খেলার মধ্যেই তাদের শিক্ষা। জানুয়ারি কনকনে শীতে স্কুল শুরুর প্রথম মাসে সাধারণত থাকে না তেমন শিক্ষার্থীদের ভিড়। এবার তার ব্যতিক্রম ছিল ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে ভোর থেকেই কোলাহল শোনা গেল শিশুদের।

ছোট আফরোজা মায়ের হাত ধরে শরীর ঢেকে, কাঁপতে কাঁপতেই স্কুলে এসেছে। স্কুলে আসল মহা খুশিতে। এমন শীতের দিনেও স্কুল আসলা কেন? প্রশ্নটা শুনে আফরোজা চোখ বড় করে বলল, স্কুল বিগাইদ করি না। বিগাইদ করলে নগদের বেতন পামু না। বেতন মানে প্রাথমিক শিশুদের উপবৃত্তি। শুধু গফরগাঁওয়েই নয়, সারা দেশেই বাচ্চাদের স্কুলে উপস্থিতির এই চিত্রটা বদলে দিয়েছে এই উপবৃত্তি। 

বাচ্চারা মনে করছে, এটা তাদের অধিকার; এটা তাদের বেতন। এর ফলেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি ও উপস্থিতির হার বেড়ে গেছে অনেক বেশি।

সম্প্রতি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে এই চিত্রই দেখা গেল। গফরগাঁওয়ের আফরোজার মা নূরজাহান বেগম বলেন, সরকার একটা বড়  কাজ করছে। বাচ্চাদের স্কুলে পড়াইলে এহন আর কোনো খরচ নাই। বই তো ফ্রি দেয়। এহন স্কুলে ড্রেস, ব্যাগ, খাতা সব কিনার টাকা পাইতাছি। বাচ্চারে স্কুলে দিলে আর সমস্যা নাই। 

আরেক অভিভাবক আনিছুর রহমান বলেন, বেসরকারী (কিন্ডারগার্ডেন) স্কুলে খরচ বেশি, লেখাপড়া কম। প্রাইভেট পড়াইতে হয়। আর প্রাথমিকে এসবের কিছুই লাগে না।

এক সময় চরাঞ্চলের শিশুরা শ্রমিক ও কৃষক হিসাবে কাজ করতো। এখন তারা সেই পেশা ছেড়ে স্কুলে যাচ্ছে। তাদের পরিবারও মনে করে আগে লেখাপড়া পরে অন্য কাজ। আগের তুলনায় চরাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এনেছে উপবৃত্তি। 

উপজেলার আউলাজুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস ও চরআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা কাবেরী দাশ জনকণ্ঠকে বলেন, উপবৃত্তি পাওয়ার ফলে কমে গেছে ঝরে পড়ার হার। সামগ্রিকভাবে বেড়ে গেছে উপস্থিতি। এটা শিক্ষার মানকে আরও বাড়িয়ে দিবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল মালেক বলেন, চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীর হার সরকারের উপবৃত্তির দেওয়ার কারণে আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বাচ্চারা ইউনিফর্মের টাকা পেয়ে এখন আর বাড়িতে থাকতে চায় না। স্কুল গুলোতে উপস্থিতির হারও বেড়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবিদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, উপবৃত্তি দেওয়ায় সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান অনেক বেড়ে গেছে। সরকারের এই উদ্যোগ দেশের জন্য অসম্ভব একটা ব্যাপার। আমরা ধাপে ধাপে সরকারের সকল কর্মসূচি তদারকি করছি। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে কোন না কোন বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে ক্লাস নিচ্ছি।

এসআর

×