
হাফসা তাসনিমের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দুটোই খুলনাতে
হাফসা তাসনিমের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দুটোই খুলনাতে। তার পড়াশোনা শুরু হয় খুলনার একটি সরকারি স্কুলে। খুলনার এম এম সিটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। তবে এত পরিচয়ের মধ্যে সমাজকর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় করাতে তিনি বেশি পছন্দ করেন।
বেশ খানিকটা সময় যাবত তিনি সামাজিক বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং সেসব কাজে তিনি তার নেতৃত্বের গুণাবলি চর্চা করে চলেছেন। তার কাছে নেতৃত্বের কোনো নারী বা পুরুষ রূপ নেই। তার কাছে নেতৃত্ব শুধুই কিছু গুণাবলি।
তাপসী রাবেয়া আবাসিক হলের সেই গণরুম থেকেই শুরু হয় তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নেতৃত্ব দেওয়া। যেকোনো সমস্যায় কে এগিয়ে আসবে, কে হয়ে উঠবে বিপদের মুখে ঢাল, এসকল টানাপড়েন উপেক্ষা করে তিনি নিজেই সর্বদা সামনে এগিয়ে এসেছেন।
এরপরে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। বাকৃবির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রিন ভয়েস বাকৃবি ইউনিটের সঙ্গে শুরু থেকেই কাজ করেছেন ২০১৯ সাল থেকেই। হাসফা ও তার মাত্র ১৫ জন বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছেন টিম উৎসব নামক আরেকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের।
কোনোরকম সাংগঠনিক জ্ঞ্যান বা মাথার ওপরে কোনো উপদেষ্টা ছাড়াই গড়ে তোলা সেই সংগঠন এখন ১১ জন শিক্ষক উপদেষ্টাসহ ৫৬ সদস্যে পরিনত হয়েছে। এ ছাড়া নারী ও শিশু অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাওয়া বহ্নিশিখার সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। কাজ করেছেন ইউনাইটেড ন্যাশনসের সঙ্গে ভলেন্টিয়ার হিসেবে। এ ছাড়া কাজ করেছেন ইউনিসেফের সঙ্গে।
করোনাকালীন যখন সবাই ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল তখন তিনি তার নেতৃত্বে ২০০ পরিবারে খাদ্য সরবরাহ করেছেন। এ ছাড়া নারী ও শিশু অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ করেছেন যেখানে মেয়েদের ক্যারাটে, শারীরিক কসরত ও আতœরক্ষার কৌশল রপ্ত করানো হয় এবং মানসিক সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। খুলনা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মোট ১৬টি জেলায় এই প্রশিক্ষণ তিনি পৌঁছে দেন তিনি।
তার এসব পরিশ্রমের অর্জন ও কম কিছু না। তার প্রথম অর্জন বাংলাদেশ ডিজিটাল সোশ্যাল ইনোভেশন ফোরাম (বিডিএসআইএফ) অ্যাওয়ার্ড। সারা বাংলাদেশ থেকে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ইউনাইটেড ন্যাশনস ভলেন্টিয়ার (ইউএনভি) অ্যাওয়ার্ড পান।
সারা বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত ১০ জনের মধ্যে ষষ্ঠ ছিলেন তিনি। টিম উৎসবের কাজের জন্য জয় বংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন। নেতৃত্বে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই এগিয়ে আসা, বাধা পাওয়া এবং সফলতা পাওয়ার ব্যাপারে হাসফার অভিব্যক্তি কিছুটা এ রকম, ‘নেতৃত্ব আমার কাছে একটি শিল্পের মতন। নিজের কাজগুলো নিজে করার মাধ্যমে অন্যরকম একটি গুণাবলি বিকশিত হয় বলে আমি মনে করি।
আমার কাজের সব ক্ষেত্রেই আমাকে প্রমাণ করে আসতে হয়েছে যে আমি আমার দায়িত্বের যোগ্য। গ্রিন ভয়েসের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে শুরু করেছিলাম এবং বর্তমানে গ্রিন ভয়েসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এ ছাড়া টিম উৎসবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। এখন সময়টাই আমাদের এগিয়ে আসার। পুরো পৃথিবী আমাদের ডাকছে। আমাদের শুধু ঘর থেকে বের হয়ে সেই ডাকে সাড়া দিতে হবে। তবেই আমরা আত্মনির্ভরশীল মানুষ হয়ে বাঁচতে শিখব।’