ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ডিআইইউ শিক্ষকদের ভাবনায় ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক শিক্ষা কাঠামো

রাকিবুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ডিআইইউ

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ১৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:৪৫, ১৮ জুলাই ২০২৫

ডিআইইউ শিক্ষকদের ভাবনায় ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক শিক্ষা কাঠামো

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষার গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাও এখন আর কেবল প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ্যক্রমে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি হয়ে উঠেছে ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। এদিকে, গত বছর শিক্ষার্থীদের রক্ত, ত্যাগ এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দেশের নাগরিক অধিকার ও শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব নতুন করে ভাবনার জন্ম দেয়। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষা সংস্কার ও আধুনিকায়ন নিয়ে নিজেদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষকরা।

শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী ও মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার গুণাবলি অর্জন করা উচিত। গত বছর জুলাই-আগস্টের বিপ্লব আমাদের দেশে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীরা যেন সহপাঠী, শিক্ষক, পরিবার ও সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিক থেকে দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসএমই ব্যবসা, অনলাইন ব্যবসা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মৎস্য খামারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। গ্লোবালাইজেশনের যুগে শুধু পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। আবার ড. ইউনুসের যে মতবাদ, দারিদ্রতা, অশিক্ষিতের হার ও বেকারত্বের হার শূন্যের কোঠায় আনার বিষয়গুলো নিয়ে তারা যেন গুরুত্বসহকারে কাজ করে শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার এই উদাত্ত আহ্বান থাকবে।

 -মো. আজমির হোসেন,চেয়ারম্যান, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ

 

শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে আমার মতে, একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা শিক্ষার্থীদের বাস্তবজীবনের দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হবে। পাঠ্যক্রমে গবেষণার সুযোগ, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং নৈতিক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ প্রদান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমতাভিত্তিক পরিবেশ নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। এছাড়া, শিক্ষা সংস্কারের মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাতে পারে। বাস্তবমুখী শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি। এতে শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক জ্ঞান নয় বরং কর্মক্ষেত্রের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। এছাড়া, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের মধ্যে সুস্থ যোগাযোগ ও মতবিনিময়ের পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে শিক্ষার মান আরও উন্নত করা সম্ভব। 

-ওমর ফারুক, বিভাগীয় সমন্বয়কারী, পুরকৌশল বিভাগ

 

বিশ্ববিদ্যালয় যে কোন মানুষের শিক্ষা এবং মুক্তচিন্তা চর্চার একটি আদর্শ ক্ষেত্র। একজন ছাত্র স্কুলকলেজের সিঁড়ি পার করে সাবালক হিসেবে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেয় তখন থেকেই তার জীবনে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে। এমতাবস্থায় তার মানসিক, চারিত্রিক ও মনস্তাত্বিক পরিবর্তন হতে শুরু করে। আর এই পরিবর্তনের অন্যতম প্রভাবক থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি অন্যসব উন্নত দেশের মত আমাদের দেশে এই সম্পর্কটা নাজুক অবস্থায় বিরাজমান। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় সেখানে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষকদের সাথে কথা বলতেও ভয় পায়। ক্লাসে বা ল্যাবে কিছু না বুঝলে প্রশ্ন করতে ভয় পায়, যেটি দুঃখজনক। আবার অধিকাংশ শিক্ষকরা নিজেদের আলাদা এক উচ্চশ্রেণির সম্প্রদায় হিসেবে প্রকাশ করতে যেন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী তার শিক্ষকের সাথে কথা বলতেও ভয় পায়, যেটি হওয়া মোটেও উচিত নয়। এছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি বেশি ওয়ার্কশপ ও সেমিনার হওয়া উচিত। এতে করে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের মেধাগত উন্নয়ন করা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যাবে তাই তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করে তৈরি করতে হবে। এছাড়া শিক্ষকরাও যেমন শিক্ষার্থীদের আপন করে নিবে তেমনি শিক্ষার্থীদেরও উচিত শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দেয়া। যদিও আমাদের শিক্ষার্থীদের মন থেকে শিক্ষকদের প্রতি থাকা অজানা শঙ্কা দূর করতে আমাদের শিক্ষকদেরই এগিয়ে আসতে হবে তাদের অভিভাবক হিসেবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যেন একটি মধুর, নির্ভয় ও ভাগাভাগি করার মত হয় সেই প্রত্যাশাই থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে।

-তাহজিব উল ইসলাম, চেয়ারম্যান, সিএসই বিভাগ

 

শিক্ষকদের দায়িত্ব শুধু পাঠদান নয় বরং শিক্ষার্থীদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে সাহায্য করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার প্রসারে আমাদের এমন একটি সমাজ গড়তে হবে যেখানে শহর থেকে গ্রাম, কেন্দ্র থেকে প্রান্ত—সব জায়গার মানুষ সমান সুযোগ পাবে। শিক্ষা হবে সর্বজনীন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন মানে শুধু একটি শ্রেণির উন্নয়ন নয় বরং এটি পুরো দেশের উন্নয়ন। এছাড়া তাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে আমরা আরও শক্তিশালী এবং ন্যায়সংগত জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারব।

-আনিসুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ

সাব্বির

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  

×