ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

বাকৃবি গবেষণা

নদীতে দৈনিক ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিকের প্রবাহ

রিয়াজ হোসাইন

প্রকাশিত: ১৯:১২, ১০ মে ২০২৫

নদীতে দৈনিক ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিকের প্রবাহ

দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাঠামো মজবুত করতে প্রতিবেশী দেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত দেশগুলোই এর প্রমাণ স্থাপন করেছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের ভূমিকা যেন ঠিক তার উল্টো চিত্র। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে প্রতি বর্গকিলোমিটার পানিতে ২৫ লাখেরও বেশি ভাসমান মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। এছাড়াও নদীর তলদেশের প্রতি কেজি পলিতে ৪৫০টি পর্যন্ত এই ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যায়। এর অন্যতম কারণ, প্রতিবেশী দেশের দৈনিক ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বিভিন্ন নদীর অববাহিকার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করছে। পরবর্তীতে এই প্লাস্টিক স্রোতের টানে দেশের অভ্যন্তরে (ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে) প্রবেশ করে। ফলে নদীগুলিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন বাকৃবির ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ। বাংলাদেশ, ভারত এবং ভুটানের বিজ্ঞানীদের যৌথ অংশগ্রহণে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। তিন বছর আগে এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ফর গ্লোবাল চেঞ্জ রিসার্চ এর অর্থায়ন এই গবেষণার কার্যক্রম শুরু হয়। মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা। নদীতে এই কণার আধিক্যের কারণে তা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মাছের দেহে প্রবেশ করছে। পরবর্তীতে মানুষ যখন এই মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তখন তা মানবদেহে জমা হয়। এর ফলে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়াও অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মৃত্যু ঘটায়, ফলে হজমের সমস্যা, অস্বস্তি, ক্লান্তি ও স্মৃতি হ্রাসসহ নানান শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। ক্ষুদ্র এই কণা যকৃত ও কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের স্বাভাবিক কাজেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
গবেষণার উদ্দেশ্যে ভুটানের হারাছু, মানস ও তোরসা তিনটি পাহাড়ি নদী ; ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্রের পাঁচটি মোহনা (টুটিং, দিব্রুগড়, তেজপুর, গৌহাটি ও ধুবরি) এবং বাংলাদেশের অংশে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পাঁচটি মোহনা (কুড়িগ্রাম, সুন্দরগঞ্জ, সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জ ও হুমুরিয়া) থেকে পানি, নদীর পলি ও মাছের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি বায়ুতে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতিও পরীক্ষা করা হয়।

প্যানেল

×