
সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সেই ১৮ বছর পেরিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন বুক ভরা মনোবল নিয়ে দেশসেবায় ব্রতী হয় তখনই তাদের সামনে আসে বিশ্ববিদ্যালয় নামক স্বপ্ন। সেই স্বপ্নেরই একাংশ যেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবছর যখন একঝাক নতুন মুখ ভর্তি হয় হাজারো স্বপ্ন ভিড় করে তাদের চোখে মুখে। আর একদিন সত্যিই সেই স্বপ্ন পূরণ করে নিজেকে দেশ ও দশের সেবায় ব্রতী করতে পারে সেই তরুণ স্বপ্নদর্শীরা। তাই তো নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় যেন সেই তরুণ স্বপ্নের সূতিকাগার।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে যখন দারোগা রফিজ উল্লাহ ত্রিশাল নিয়ে আসেন তখন তার বয়স সবে ১৪ বছর। সেই ১৪ বছরের কিশোরের দুরন্তপনার সাক্ষী আজ ও বর্তমান ত্রিশালের সর্বত্র। তার নামেই নামাঙ্কিত হয় ২০০৬ সালের ৯ মে প্রতিষ্ঠা পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি। এটি ময়মনসিংহ শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬টি অনুষদ রয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ৪টি বিভাগ, ব্যবসায় প্রসাশন অনুষদের ৫টি বিভাগ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৭টি বিভাগ, কলা অনুষদের ৭টি বিভাগ এবং আইন ও চারুকলা অনুষদের রয়েছে আরো একটি করে বিভাগ। ৬টি অনুষদে মোট বিভাগ রয়েছে ২৫টি।
এখানকার স্নিগ্ধ পরিবেশ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সহায়ক। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি একাডেমিক ভবন রয়েছে। এছাড়াও ছেলেদের জন্য বিদ্রোহী ও অগ্নিবীণা নামে দুটি হল এবং মেয়েদের জন্য শিউলিমালা ও দোলনচাপা নামে দুটি হল আছে। চন্দ্রবিন্দু ও চক্রবাক নামে দুটি ক্যাফেটেরিয়াও আছে এখানে। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশেই আছে সুবিশাল লাইব্রেরি-যেখানে প্রতিদিন হাজার তরুণেরা তাদের স্বপ্ন বুনে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন অবধি ৭ জন উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
গবেষণার ক্ষেত্রে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এক উজ্জ্বল নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ’ নামে একটি ইনস্টিটিউট আছে। এটি জাতীয় কবির বিভিন্ন গান, কবিতা, উপন্যাস, নাটক সর্বোপরি তার জীবনী এবং জীবনকর্মের ওপর গবেষণার জন্য একটি ইনস্টিটিউট। প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রমীলা বৃত্তি, বুলবুল বৃত্তি, কাজী সব্যসাচী বৃত্তি, কাজী অনিরুদ্ধ বৃত্তি ও উমা কাজী বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে।
প্রতি বছর এক ঝাক নতুন শিক্ষর্থীরা ক্লাবের কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন ইভেন্ট, সৃজনশীল কাজ আর সামাজিক সচেতনতার জায়গাগুলোয় নিজেদের সৃজনশীলতার ছাপ রেখে যায়। তাদের এই দক্ষতাকে আরও শাণিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, কর্মদক্ষতা উন্নয়নমূলক ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিসেবে আছে মার্কেটিংক্লাব, বিজনেস ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব, রোটারেক্ট ক্লাব, গ্রীন ক্যাম্পাস, নির্ভয় ফাউন্ডেশন, রংধনু, অরণ্য, ডিবেটিং সোসাইটি, হাল্ট প্রাইজ, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি ক্লাব, ইইই ক্লাব, কুয়াশা উৎসব আয়োজক পর্ষদ, সংগঠনগুলো। এসবের পরিচালনার দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের জন্য রয়েছে সাংবাদিক সমিতি, সাংবাদিক ফোরাম ও প্রেসক্লাব নামক ৩টি স্বতন্ত্র সংগঠন। এ ছাড়া আছে রোভার স্কাউটের মতো আন্তর্জাতিক আন্দোলন।
প্যানেল