ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

কানাডা উচ্চশিক্ষায় পছন্দের শীর্ষে

শেরিফ ফারুকী

প্রকাশিত: ১৮:৩৪, ১০ মে ২০২৫

কানাডা উচ্চশিক্ষায় পছন্দের শীর্ষে

ম্যাপল লিফের দেশ কানাডা। এই দেশে এখন ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে বিশাল বাংলাদেশি কমিউনিটি। এর একটা বড় অংশই দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার্থে যাওয়া ছাত্ররা। টিউশন ফি’র গা সওয়া নীতি, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা এবং পড়াশোনা শেষে নাগরিকত্ব ও চাকরির সুযোগ লুফে নিচ্ছে অনেকেই। এক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ কানাডার বেশ কয়টি স্কলারশিপ।

স্কলারশিপ পেতে হলে
কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলের ভিত্তিতে স্কলারশিপ দেয়। তবে তা পেতে হলে টোয়েফল, আইইএলটিএস, জিআরই বা জিম্যাট পরীক্ষায় ভালো স্কোর থাকা আবশ্যক। আমরা একটু জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি কারা কারা দেয় এই স্কলারশিপ। জেনে রাখা ভালো, কোনো কোনো স্কলারশিপে কেবল টিউশন ফি-র খরচ বহন করা হয় এবং কোনো কোনো স্কলারশিপে থাকা-খাওয়াসহ সব ধরনের খরচ বহন করা হয়। নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্কলারশিপ তুলে ধরা হল।
১. কানাডিয়ান কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অ্যান্ড ফেলোশিপ প্ল্যান
২. শাস্ত্রী ইন্দো-কানাডিয়ান ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ
৩. অন্টারিও গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
৪. ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল অফ কানাডা (এনআরসিসি)
৫. ম্যাককল ম্যাকবেইন স্কলারশিপ
৬. আসিয়ান বৃত্তি

কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অ্যান্ড ফেলোশিপ প্ল্যান
এই স্কিমটি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলির শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স এবং পিএইচডি স্তরে উন্নত অধ্যয়ন এবং গবেষণার প্রোগ্রামে আবেদনের সুযোগ দেয়। ১৯৫৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই স্কলারশিপ থেকে এখন পর্যন্ত ২৫,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী ব্যয় মিটিয়েছেন। শাস্ত্রী ইন্দো-কানাডিয়ান ইনস্টিটিউট: স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর এবং গবেষণা থেকে প্রশিক্ষণ ফেলোশিপ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ফেলোশিপ অফার করে থাকে। এক্ষেত্রে থাকা খাওয়ার খরচও মেটায় এই ইনস্টিটিউট।
অন্টারিও গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
কানাডার অন্টারিওতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এটি, পিএইচডি বা ডক্টরেট সম্পন্ন করার জন্য যোগ্য শিক্ষার্থীদের মেধা ভিত্তিক বার্ষিক স্কলারশিপ দেয়। বৃত্তির জন্য যোগ্যতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীকে যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে ৮০% মার্ক পেতে হয়।
অন্টারিও গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ একজন শিক্ষার্থীকে যেকোনো স্নাতক প্রোগ্রামে একক দুই বা তিন-মেয়াদী শিক্ষাবর্ষের জন্য [ প্রাপক শিক্ষার্থীকে অন্টারিওতে একটি পূর্ণ-সময়ের স্নাতক প্রোগ্রামে যোগদান করতে হবে।

ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল অফ কানাডা (এনআরসিসি)
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পিএইচডিধারীদের জন্য গবেষণায় স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। এটি কানাডার বৃহত্তম ফেডারেল গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা।
আপনার পড়াশোনার মেয়াদ পরে শেষ হলেও অথবা আপনার সমস্ত একাডেমিক ফলাফল না পেলেও, আপনাকে অবশ্যই সময়সীমার আগে আপনার আবেদন জমা দিতে হবে।

ম্যাককল ম্যাকবেইন স্কলারশিপ
কানাডার গবেষণাভিত্তিক একটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮২১ সালে যাত্রা শুরু বিশ্ববিদ্যালয়টির। ১৫০টির বেশি দেশ থেকে প্রতিবছর হাজারো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য যান। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৪০০টির বেশি প্রোগ্রাম রয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে স্কলারশিপ হয়।

আসিয়ান স্কলারশিপ
এর আওতায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভের সুযোগ রয়েছে। এটি সম্পূর্ণভাবে অর্থায়িত, এবং কানাডার সরকার এই বৃত্তির আওতায় টিউশন ফি পরিশোধ করবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের জন্য জীবনযাত্রার খরচের মাসিক ভাতা প্রদান করা হবে। এছাড়া রাউন্ড-ট্রিপ ফ্লাইট, স্বাস্থ্যবিমা কভারেজ এবং আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীরা কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
যা যা প্রস্তুত রাখতে হয়
আবেদনকারীদেরকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে আবেদনের সাথে। যেমন পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি, অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের স্ক্যান কপি, গবেষণা প্রস্তাব, নিজ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রমাণপত্র, আইএলটিএস স্কোর, আপডেট সিভি, ব্যক্তিগত বিবৃতি এবং সুপারিশপত্র ইত্যাদি লাগবে আগে।

স্কলারশিপের যোগ্যতা
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন সরকারি বৃত্তির সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। এসব বৃত্তির ক্ষেত্রে আবেদনের যোগ্যতাও ভিন্ন ভিন্ন। তবে যে বৃত্তির জন্যই আবেদন করুন না কেন, বাংলাদেশে আপনি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছেন, ফলাফল কেমন, এগুলো বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে যুক্ততা, গবেষণায় সংশ্লিষ্টতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন ভিন্ন আইইএলটিএস স্কোরকে ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই আইইএলটিএসে অন্তত ৬.৫ স্কোর চায়।

বৃত্তি ছাড়া পড়লে খরচ কেমন
বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে টিউশন ফি আলাদা। স্নাতক প্রোগ্রামে প্রতি সেমিস্টারে খরচ পড়বে ১০ থেকে ১২ হাজার কানাডিয়ান ডলার (৭ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রায়)। মাস্টার্স প্রোগ্রামেও প্রতি সেমিস্টারে খরচ প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার কানাডিয়ান ডলার। সেই হিসাবে বৃত্তি ছাড়া পড়তে পূর্ণকালীন স্নাতকে খরচ ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ কানাডিয়ান ডলারের কাছাকাছি। বৃত্তি ছাড়া স্নাতকোত্তরে পড়তে প্রায় ৩০ হাজার কানাডিয়ান ডলার খরচ হতে পারে।

সেমিস্টার
কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবছর তিনটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করে ফল (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর), উইন্টার (জানুয়ারি-এপ্রিল) এবং সামার (মে-আগস্ট)।

কাজের সুযোগ
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের সুযোগ সীমিত। ৬-১২ মাস পড়াশোনার পর অব ক্যাম্পাস ওয়ার্ক পারমিটের মাধ্যমে কাজ করা যায়। তবে পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা টিচিং বা রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজের সুযোগ পান। ইন্টার্নশিপের জন্য অতিরিক্ত কোর্স ও পরীক্ষা দিতে হতে পারে। শিক্ষার্থীরা মাসে গড়ে ৬০০-৮০০ ডলারে থাকা-খাওয়ার খরচ সামলাতে পারেন। এই খরচ রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করলেই উঠে আসবে।

কী কী প্রস্তুত থাকতে হবে
১. অন্তত ৬ মাসের মেয়া থাকা পাসপোর্ট
২. ৬ থেকে ৭.৫ আইইএলটিএস স্কোর
৩. অন্তত ৫টি কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন
৪. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
৫. ডকুমেন্ট নোটারি করে নিতে হবে।
৬. ট্যাক্স ফাইল, ১৮ বছর হলে কানাডায় আবেদন করতে ট্যাক্স ফাইল জমা দিতে হয়।
৭. টিউশন ফি, বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ফি কমবেশি হয়। বাংলাদেশি টাকায় এক সেমিস্টারের খরচ কমপক্ষে তিন লাখ টাকা।
৮. অফার লেটার
৯. স্টাডি পারমিটের আবেদনপত্র
১০. এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার সনদ
১১. স্বাস্থ্য পরীক্ষা সনদ

চলতে ফিরতে খরচ কেমন?
প্রদেশ কিংবা পরিবেশভেদে জীবনযাত্রার ব্যয় ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় ডরমিটরিতে থাকলে এক রকম খরচ, আবার আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে রুম ভাগ করে থাকলে খরচ আরেক রকম। অন্টারিও প্রদেশের অটোয়া শহরে একজন শিক্ষার্থী ১২০০-১৩০০ কানাডিয়ান ডলারে খুব ভালোভাবে চলতে পারে। একই সময়ে নিউ ব্রান্সউইকের ফ্রেডরিকটনে এই খরচ হয়তো ১০০০-১১০০ ডলার। আবার টরন্টো বা ভ্যাঙ্কুভারে ১৯০০-২০০০ ডলার খরচ হয়ে যায়।

সেরা বিশ্ববিদ্যালয়
কিউএস র‌্যাঙ্কিং ২০২৫ (বিশ্বব্যাপী)
১. টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় (২৫)
২. ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় (২৯)
৩. ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (৩৮)
৪. আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয় (৯৬)
৫. ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় (১১৫)

পড়াশোনার জন্য সেরা শহর
টরন্টো: কানাডার বৃহত্তম শহর হিসেবে পরিচিত, টরন্টোতে রয়েছে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক দৃশ্য এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় এবং রিয়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান।

মন্ট্রিল: কানাডার সাংস্কৃতিক রাজধানী। মন্ট্রিল তার দ্বিভাষিক আকর্ষণ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। এটি ধারাবাহিকভাবে ছাত্র শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কারণ: ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি ডি মন্ট্রিলের মতো শীর্ষ-স্তরের বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যান্য প্রধান শহরের তুলনায় প্রাণবন্ত শিল্পকলার পরিবেশ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জীবনযাত্রার খরচ।

ভ্যাঙ্কুভার: উদ্ভাবন এবং প্রকৃতির প্রবেশদ্বার বলা হয় এ শহরকে। পাহাড় এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত, ভ্যাঙ্কুভার মানসম্মত শিক্ষা এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের সন্ধানকারী শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত। উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে: ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাইমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।

অটোয়া: কানাডার একাডেমিক এবং রাজনৈতিক হৃদয়। রাজধানী শহর হিসেবে, অটোয়া একাডেমিক উৎকর্ষতা এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির ভারসাম্য প্রদান করে। শিক্ষার্থীরা নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি থেকে উপকৃত হয়: কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

প্যানেল

×