ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরিষা আবাদে লাভবান কৃষক

হাসিব রহমান

প্রকাশিত: ০০:৪২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সরিষা আবাদে লাভবান কৃষক

সরিষা খেত পরিচর্যা করছেন ভোলা উপজেলার কৃষক পারভেজ

কৃষি কাজ করেই চলে তাজুল ইসলামের সংসার। তিনি এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। তার দিগন্তজোড়া সরিষা খেতে সরিষা দানার থোকা বাতাসে দুলছে। আর কিছুদিন পরই  খেতের আবাদকৃত সরিষা ঘরে তুলবেন তিনি। কৃষি বিভাগ থেকে সরকারিভাবে ২ কেজি বীজ পেয়েছেন এবং আরও ২ কেজি কিনে এ বছর দেড় একর জমিতে অগ্রহায়ণ মাসে সরিষা আবাদ করেছেন।

এতে তার প্রায় ৬/৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় লাভের স্বপ্ন দেখছেন। তার আশা বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন। ২২ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুরে এমন প্রত্যাশার কথাই জানিয়েছেন, ভোলা সদর উপজেলার হাজির হাট বুড়ি মসজিদ সংলগ্ন এলাকার কৃষক  মো. তাজুল ইসলাম। 
তিনি আরো বললেন, গত বছর সরিষা আবাদ করে খুব অল্প সময়ে তার ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। তাই এ বছর আবারও সরিষার আবাদ করেছেন। আগামী বছর তিনি আশা করছেন ২ একর জমিতে আবাদ করবেন। তার মতো এলাকার আবদুল খালেকসহ বহু কৃষক সরিষার আবাদ করেছেন। কাঁচা সরিষা ফুলের মন জুড়ানো দৃশ্যে যেমন হাসি ফুটেছিল কৃষকের মুখে। তেমনি ভালো ফলন আসায় লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এখন সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
কৃষি বিভাগের মতে, ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এ বছর জেলায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করতে ১০ হাজার ২শ’ কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, গত মৌসুমে ভোলা জেলায় ৫ হাজার ৮ শত হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়।

আর উৎপাদন হয়েছিল ৮ হাজার ১২০ মেট্রিকটন। লাভজনক ফসল হওয়ায় এ বছর প্রায় ২৮ হাজার কৃষক সরিষা আবাদ করেছে। এ বছর সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্র ৫ হাজার ৮শ’ হেক্টর হলে আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা জানায়, ভোলা জেলায় সাধারণত বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৬, বারি-১৭, বারি-১৮, বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-৪ জাতের আবাদ বেশি করা হয়।

আমন ও বোরো ধানের মাঝামাঝি সময়ে চাষ হওয়া সরিষা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। সরিষার পাতা থেকে সৃষ্ট জৈব সার ধানের পুষ্টি জোগান দেয়। বীজ রোপণের পর থেকে সর্বোচ্চ ৮০-৯০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। প্রথম দিকে আগাছা পরিষ্কারের কাজ ছাড়া তেমন পরিশ্রমও হয়না সরিষা চাষে। তাই স্বল্প সময়ে চাষ সম্ভব বলে অনেক চাষিই সরিষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
ভোলার পূর্ব ইলিশার গুপ্ত মুন্সি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পারভেজ মিজি তার সরিষা খেতে শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি জানান, তিনি গত ৮/১০ বছর ধরে সরিষা আবাদ করছেন। এ বছর ৬ গ-া জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। ৫ মণ সরিষা হয়েছে। তিনি ১৮ হাজার টাকায় বিক্রিও করেছেন। তার ১০/১২ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। তবে এবার বীজ খারাপের কারণে ফলন তেমন ভালো হয়নি। সরকারি কোনো প্রণোদনাও পাননি। তাই লোকসানের আশঙ্কা করছেন। 
কৃষকরা আরও জানান, সরিষা চাষে বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রতি বিঘা জমিতে সরিষার ফলন আসে ৬-৭ মণ। যার বাজার মূল্য ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে কৃষকের বিঘাপ্রতি ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা লাভ হয়। এছাড়া, য জমিতে সরিষার আবাদ হয়, সেখানে ধানও ভালো হয়। সরিষার গাছ শুকালে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাই এটি একটি লাভজনক ফসল। কৃষি বিভাগ জানান, উৎপাদিত সরিষা ভোলার বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে যায়।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানান, ভোলায় সরিষা আবাদের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। আগামীতে সরিষা আবাদের পরিমাণ আরও বাড়বে। বিশেষ করে সরিষার নতুন জাত বারী-২০ আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা বাজার দর ভালো পাচ্ছেন।  আমরা তাদের কে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রণোদনা বীজ দিয়েছি। প্রদর্শনীর বীজ দিয়েছি। এসএমইর বীজ দিয়েছি। এমনকি সারসহ কারিগরি সহযোগিতা ও পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

×