ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশ

মৃদুল কান্তি

প্রকাশিত: ০১:৩২, ২৮ আগস্ট ২০২২

বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশ

বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা

বর্তমান বিশ্ব মোটামুটি দুই মেরুতে ভাগ হয়ে গিয়েছেএকদিকে রাশিয়া অন্যদিকে আমেরিকাদুই ক্ষমতাধর দেশের দড়ি টানাটানিতে বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থাঅন্যদিকে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার৭৭ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয় আসে ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকেঅন্যদিকে দেশের অন্যতম আমদানিকারক দেশ চীন এবং ভারত যা প্রায় ৪১ শতাংশ

আমাদের আমদানি এবং রফতানিকারক দেশসমূহ দুই বিপরীত মেরুতেফলে বৈশ্বিক কোন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বাংলাদেশের পক্ষে খুবই কঠিনবঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়নীতিতে চলা ছাড়া আমাদের অন্যকোন পথ খোলা নেইরাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক স্থিতিশীলতা প্রায় নষ্টের পথে। 

আন্তর্জাতিক বিনিময় মুদ্রা ডলার এবং আমাদের সিংহভাগ রফতানি আয় ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে আসে সেহেতু উক্ত অঞ্চলের প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই বেশিআবার যেহেতু আমাদের প্রধান ঋণদাতা দেশ চীন এবং রাশিয়া সেহেতু এই দুই দেশের প্রভাবও কম নয়তবে ২০২৪ থেকে ২৬ সালে চীন-রাশিয়ার প্রভাব আরও তীব্র হতে পারেবর্তমানে বাংলাদেশে ২০টি মেগা প্রকল্প চলমানএসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ৭০ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারএর মধ্যে বিদেশী ঋণই ৪৩ বিলিয়ন ডলারএসব ঋণের সবচেয়ে বড় অংশ রাশিয়া (৩৬ শতাংশ), জাপান (৩৫ শতাংশ) ও চীনের (২১ শতাংশ)

গত মাসে রাশিয়ার দূতাবাস তাদের ভেরিফাইড টুইটারে এক বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে যা রাশিয়ায় শত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাদের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থার কথা তুলে ধরেএরই সঙ্গে পশ্চিমাদের আসছে শীতের কথাও স্মরণ করিয়ে এক সর্তকবার্তাও দিয়ে রাখে- উইন্টার ইজ কামিং

ইতোমধ্যে আসছে শীতে জ্বালানি বাবদ বাড়তি ব্যয়ের কারণে যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে সিএনএনের এক রিপোর্টেসে হিসেবে আসছে শীতে জ্বালানি জন্য বাড়তি ব্যয়ের চাপ পুরো ইউরোপজুড়েই বিস্তৃত হবেআর ইউরোপ চাপে পড়া মানে এর প্রভাব আমাদের রফতানি আয়ের উপরেও যে পরবে তা বলাই বাহুল্যএই পরিস্থিতিতে এখন থেকেই আমাদের দূরদর্শী কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন

ইতোমধ্যে বর্তমান সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছেপ্রথমত, ভারতের সঙ্গে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর প্রস্তাবদ্বিতীয়ত, রাশিয়া থেকে তেল কেনার উপায় খোঁজার নির্দেশনা

স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের মোকাবিলা করে আমরা একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছিএবারও দক্ষ, দূরদর্শী এবং সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে এই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারব বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস

×